পাবনা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে যাদেয় নাম উল্লেখ না
করে কোন তথ্যই উপস্তাপন করা কঠিন
তাদের মধ্যে অনেকেই।
ইতিমধ্যে চলে গেছে মুষ্টি মেয় কিছু নেতা আছেন যা কালের বিবর্তনে জরা ব্যাধী আক্রান্ত হয়ে রহিত
হয়ে আছেন।
একটি মহানুভত্ব নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযােদ্ধা কালের স্বাক্ষী হয়ে এখন বেঁচে আছেন তিনি
আমাদের সকলের প্রাণ প্রিয় জনাব গােলাম আলী কাদেরী।
পাবনা মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান নিয়ে তারি লেখনি আগামি প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করা হলাে।
৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তার কালজ্বয়ী ভাষণে স্বাধীনতার ঘােষণা দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে যে দিক দর্শন দেন
তার মর্মাথ পাবনাবাসী বুঝেছিল বলেই সেদিন যার যা আছে তাই নিয়েই পাবনা থেকে পাক হানাদার
নিধনে ঝাপিয়ে। পড়েছিল।
এবং পাবনাকে মুক্ত করেছিল।
২৫ই মার্চ বাঙ্গালী নিধনের নীল নকশা তৈরি করে সমগ্র বাংলাদেশে। অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে শুরু
হলাে রক্তের হলি খেলা।
পাবনাও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বিবাদের জের ধরে রাধানগর
ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার নূরুল ইসলাম (নূরু খন্দকার) বাড়ীর ভিতরে থেকে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুস শুকুরকে
গুলি করে হত্যা করে।
রাত ৮ টার। মত হবে। আওয়ামি লীগের পাবনা জেলার সভাপতি আমজাদ হােসেন সাধারণ সম্পাদক
আঃ রব বগা মিয়া
সদর থানা সভাপতি আমিন উদ্দীন সাধারন সম্পাদক গােলাম আলী কাদেরী ও আলতাফ হােসেন
সংগঠনিক সম্পাদক
দফতর সম্পদ এ কে এম হাসান হীরা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ শাহজাহান প্রমুখ
। নেতারা হামিদ রােডের আওয়ামি লীগ অফিসে একত্রিত হয়। জনগন শুকুর হত্যার তখন দারুন ক্ষুদ্ধ।
এমন সময় পাবনার ডিসি, নূরুল কাদের খান আমজাদ হােসেন বগামিয়া, আমিন উদ্দীনকে তার বাংলােয়
ডেকে পাঠায়
। ক্ষুদ্ধ জনগনের মনােভাব যেন কিছুতেই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকার কথা বলে চলে গেল
। পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে চিন্তা করছি তখন রাত ১২টা বেজে গেছে তখন তারা এসে জানালাে সমগ্র পূর্ব
পাকিস্থানে আর্মি ক্র্যাক ডাউন। করেছে। আমরা তখনও জানতামনা নিরাপরাধী নিরস্ত্র, পুলিশ ও ইপি আরদের।
নিঃশংস, পৈশাচিক ও বর্বর হত্যা কান্ড চালিয়েছে রাজারবাগ ও পিল খানায়। আমজাদ ভাই বললাে আগামি কাল
রাজশাহী থেকে ১ কোম্পানী পাকিস্তানী সেনা পাবনায় আসবে। তােমরা যার যার বাড়ী গিয়ে পরিবার পরিজনদের নিরাপদ স্থানে রেখে এসাে। কর্মিদের বলে দাও দাশুড়িয়া, নগর বাড়ী রাস্তায় শক্ত বেরিকেটের বেষ্টনি তৈরি করতে। এবং পুলিশেরা প্রস্তুত থাকে। রাত ১২টা থেকে ভাের ৫টা পর্যন্ত জনগনকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য মাইকের প্রচার অব্যাহত রাখা হলাে। আমরা। উৎকণ্ঠার মধ্যে ভাের পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছাত্র লীগের সভাপতি আঃ সাত্তার লালুকে নির্দেশ দেওয়া হলাে, আমজাদ হােসেন, আঃ বর বগা মিয়া, এম, মনসুর আলী সহ সকল নেতারা তাদের পরিবারসহ নিরাপদ স্থানে রাখতে চলে যায়। সকাল হয়ে গেছে। তারু নন্দীর দোকানে গেলাম নাস্তা করতে। নাস্তা করছি এমন সময় দেখলাম হামিদ রােড ধরে হানাদার বাহিনীর কয়েকটি কনভয় কাচারির দিকে চলে যাচ্ছে। কনভয় গুলাে কোন দিকে যাচ্ছে জানার জন্য পাহারাদারদের। সদ্দার ছােবহান পাঠান খানকে কাচারির দিকে পাঠালাম। আধা ঘন্টা পর ও এসে খবর দিল একটি কনভয় নগর বাড়ী রােড দিয়ে চলে গেল আর একটি বিসিকে অবস্থানের জন্য চলে গেছে। এর মধ্যে জানা গেল আমজাদ ভাইও বগা চাচার। বাড়ীতে হানা দিয়ে তাদের না পেয়ে মুজাহিদ ক্লাবের ওখানে দাড়িয়ে আছে। লালু। জানাল আমিন উদ্দীন বাবু মিয়ার বাড়ীতে পালিয়ে আছে। আমজাদ মনসুর বগা । মিয়া তাদের পরিবার নিয়ে দ্বিপচর বিশ্বাসদের বাড়ীতে অবস্থান নিয়েছে। তার নন্দীর দোকান থেকে নাস্তা সেরে আমি, উদ্দীন ভাই, লালু, আলতাফ ভাই ইসলামিয়া কলেজের দিকে (বুলবুল কলেজ) যাওয়ার পথে মেজর জাবেদকে পেলাম। তখন ৯টা বেজে গেছে মুজাহিদ ক্লাব সংলগ্ন বাড়ী ছাত্রলীগের গােলাম হায়দার বাবলু জানালাে পাক হানাদারেরা ২ জন পথ চারিকে গুলি করে মেরেছে।। বেপরােয়া গুলি বর্ষন শুরু করেছে। সে আমাদের কাছে তাদের প্রতিরােধ করার হুকুম চাইলাে। তাকে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলে ওখান থেকে চলে গেলাম। সিদ্ধান্ত মােতাবেক আমরা ৩ জন চলে গেলাম মালঞ্চী গ্রামের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান এর বাড়ীতে মেজর জিয়ার ঘােষণা শুনছিলাম রেডিওতে। তিনি বলেছিলেন আমি জিয়া বলছি, আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। পক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘােষণা করছি। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না বঙ্গবন্ধু। আমাদের মাঝেই আছে ইত্যাদি। পাশাপাশি রেডিও পাকিস্তানে থেকে সামারিক। শাসক ইয়াহিয়া তার ভাষণে আওয়ামি লীগকে দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ববিনষ্ট কারি শত্রু আখ্যা দিয়ে বলেন Sheikh Majib is a Traitor. His party Awami League Shall not be Spared Unpunished তার রেডিও বারবার প্রচার করতে লাগলাে। বিকালে দিকে মাহমুদপুর ইউসুফ | খান চেয়ারম্যানের বাড়ী থেকে ফিরে এলাম। পাবনা শহরে থাকা নিরাপদ নয় যে কারণে পরিবারের সবাইকে রাঘবপুরের খামার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে সবে মাত্র। ঘরে গিয়ে কাপড় পালটাচ্ছি সে সময় এক ট্রাক আর্মির গাড়ী আমার বাড়ীর সম্মুখে। দাড়াল। বেগতিক দেখে দোতালা থেকে লাফ দিয়ে পাচিল টপকিয়ে বেলতলা রােডে চলে গেলাম। রাস্তা ফাকা কেউ প্রয়ােজন না হলে বাড়ী থেকে বের হচ্ছেনা। এ সময় কি ভাবে খবর পেয়ে পুলিশের ডিএসপি গাড়ী নিয়ে চলে এলাে তিনি জানালেন পাক আর্মিরা পুলিশের ম্যাগজিনের দখল চাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা কি করবে। এসপি সাহেবের সাথে আলাম করে সন্ধ্যার পর ফয়সাল। জানাব বলে উনাকে বিদায় দিলাম।সন্ধ্যায় এসপি সাহেবের বাসায় ঢুকতেই দেখি সম্মুখের মাঠে যুই মেম্বার, হাবিব ফারুক, সন্টু, শুকটা সহ প্রায় ২০০ জন ছেলেরা জড়াে হয়ে মিটিং করছে। তাদের কাছে আমজাদ ভায়ের খবর জানতে চাইলে তারা জানালে তিনি দ্বীপ চরে বিশ্বাসদের বাড়ীতে আছে। ইতিমধ্যে ওয়াজিউদ্দীন খান এসে জানাল ডিসি ও এসপি সাহেব কুঠিপাড়া হাসান বিশ্বাসের বাড়ীতে আছে। সেখানে নেতারা সবাই আছে সন্ধ্যার পর আলােচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। উদ্দীন ভাইকে সাথে নিয়ে কুঠিপাড়ায় গেলাম। যেয়ে দেখলাম, ছাত্রলীগের রফিকুল ইসলাম বকুল, ইকবাল, আহম্মেদ করিম সহ অনেকেই উপস্থিত আছেন। ম্যাগজিন হাত ছাড়া করা, যাবেনা। তিনি একটি ম্যাপ তৈরি করে পুলিশ ব্যুহ রচনা করলেন। জজকোর্টের পশ্চিম ও উত্তর বারান্দায় ২ জন পুলিশ, ছাদে ২ জন, পুলিশ লাইনের দোতলায় ২ জন। জেল খানার গেটে সারিবদ্ধ ১০ জন তাদের সাহায্য করার জন্য ১২ জন করে ডিউটি করবে। আর, ও মমতাজের কাছে এ ম্যাপ প্রদান করে তা তামিল করার আদেশ দেন। একজন অফিসারের নেততে ১ ট্রাক পাক আর্মিরা এসে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে। ম্যাগাজিনের চাবি চায়। তখন পুলিশের গুলির জবাব পেয়ে আর্মিরা পিছু হটে। দখল নেওয়ার জন্য। তারা আবার ম্যাগজিন খানায় চলে আসে এদিকে পুলিশের সাথে হাজার হাজার জনতা যােগ দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। যে যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাস্ত হয়ে বিসিকে চলে যায়। এদিকে স্বাধীনতা কর্মী মুক্তিবাহিনী ম্যাগজিন খুলে সমস্ত হাতিয়ার নিজেদের দখলে নেয়। ২৮ তারিখে বেলা ১১ টার দিকে দেওয়ান মাহাবুবুল হক, হাবুল, বাবু মিয়া, ইকবালের নেতৃত্বে হাজার জনতা মিলে টেলিফোন একচেঞ্জ অবস্থান রত পাক আর্মির উপর আক্রমন চালায়। সেখানে ৩৬ জন সৈন্য ছিল, ইকবাল ও বকুল কৌশলে পাক আর্মিদের এলএমজি কেড়ে নেয়। ঐ এলএমজি দিয়েই অবস্থান রত সকল সৈন্যদের হত্যা করা হয়। মসলেম প্রাং মােড়ে একতলা বিল্ডিং এ ১১ জন পাক সৈন্য ছিল। পাবনা থানার ওসি মােয়াজ্জেম হােসেনের নেতৃত্বে পুলিশ জনতা, উত্তর পাশে মহসিন বেগ আজিজল মাষ্টার বুলবুল ও জনতা এক যােগে আঘাত হানে। ভারি ফায়ারে এলাকা। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ২ দিনের আক্রমনে পাক বাহিনীর ১১ জন সৈন্য নিহত হয়। ওখানে ভারি মেশিন গান চাইনিজ রাইফেল সহ ১১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ২৭ মাটি ও পাবনা টেকনিক্যাল স্কুলের দোতালায় আওয়ামি লীগের নেতৃবৃন্দও প্রশাসন। মিলে একটি পাবনা জেলা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় তারা হলেন
সভাপতি ও জনাব আমজাদ হােসেন (এমএনএ) এই সংগ্রাম পরিষদের নেতা হলেন
সহ সভাপতি জনাব আব্দুর রব বগা মিয়া
সচিব ঃ নুরুল কাদের খান (ভি.সি, পাবনা)
যুগ সচিব ঃ আঃ গফফার চৌধুরী (এস,পি পাবনা)
সাধারণ সম্পাদক ঃ গােলাম আলী কাদেরী
সদস্য ওয়াজিউদ্দীন খান
সদস্য ও দেওয়ান মাহববুল হক।
সদস্য ও আব্দুস সােবহান (চেয়ারম্যান দােগাছি ইউপি)
ছাত্রনেতা আব্দুস সাত্তার লালু, ইকবাল হােসেন, রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবি
ইসলাম।।
এই সংগ্রাম পরিষদের একমাত্র জীবিত আছেন গােলাম আলী কাদেরী ও ওয়াজিউদ্দীন খান, বেবি ইসলাম। | ২৮ মার্চের যুদ্ধে পাক বাহিনী সম্পূর্ন পরাস্ত হয়। যে কারণে পাবনার প্রশাসনিক ব্যাবস্থা চালু করে অফিস আদালত খােলার ফরমান জারী করা হয়, কিন্তু জেল থেকে মুক্ত হয়ে মাওবাদি নকশালেরা অশান্তির বীজ বােনা শুরু করলাে। ৪ এপ্রিল পাবনাবাসীর প্রাণ প্রিয় নেতা আমজাদ হােসেন হার্ট স্ট্রোকে মৃত্যু বরন করলে পাবনা বাসির সামনে দুর্যোগ নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমজাদ ভাই ও বগা ভাইকে বড় ভাই হিসাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে বন্ধু রূপে মনে করতেন।
২৯ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পাবনা মুক্ত থাকে যে কারণে ঐ সময় ক্যালকাটা আনন্দ বাজারও ইষ্টটেমেন্ট প্রত্রিকার সাংবাদিক পাবনা আসে। পাবনা মুক্ত হওয়ার সংবাদ ফলাও করে প্রচার করে। ২৯ মার্চ আর্মিরা সকালে যাওয়ার আগে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড্যঃ আমিউদ্দিন এমপিএ, ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, আবু সাঈদকে হত্যা করে।
১লা এপ্রিল ঃ পাবনা সংগ্রাম কমিটির সংঙ্গে চুয়াডাঙ্গার এমপিএ ডাঃ আসাবুল। হক ও ইপিআর এর সেক্টর কমান্ডার মেজর ওসমান এর মধ্যে আলােচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয় পাবনাকে মুক্ত রাখতে ৬০০ সসজ্জিত ইপিআর এর সদস্য তাদের অস্ত্রসস্ত্র ও রসদ সম্ভার প্রয়ােজন মত দেওয়ার অঙ্গিকার করে। তাদের রাজ হওয়ার সকালে আমি নবাব মােল্লা ও তার ভাগ্নেকে নিয়ে স্পেশাল ট্রেনে চুয়াডাঙ্গায় পেছায়। মেজর ওসমানের বাসায় তখন বিএসএফ এর ইষ্টান উইং এর কমান্ডার উ9্যাচাৰ্য উপস্থিত ছিল। তার সাথে কথা হয় ১ দিনের মধ্যে চাহিদা মত অস্ত্রসত্র পাবনাতে পৌছে দেওয়া হবে। কথা শেষ করে পাবনাতে ফিরে আসি।
| ৩ রা এপ্রিল ৪ ক্যাপ্টেন বজলুল হুদার নেতৃত্বে নগর বাড়ী ঘাটে খালি পল্টনে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হলাে।
| ৪ঠা এপ্রিলঃ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ইপিআর ওয়ারলেস যােগে বেড়ার অধ্যাপক আবু সাঈদ এম,এন,এ কে কাজিপুরে ডেকে পাঠায়। তাকে সাথে নিয়ে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথের মধ্যে জয়পুর হাটের এম.এন. এ ডাঃ মফিজ উদ্দিনের সাথে দেখা হয় এবং সঙ্গে করে নিয়ে যায়।
| ৫ এপ্রিলঃ আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডঃ আমজাদ হােসেন ও ন্যাপ নেতা বাবু রনেশ মৈত্রকে ভলগা ওয়াগন গাড়ী কের কোলকাতায় পাঠানাে হয়।
| ১০ এপ্রিল ও নগর বাড়ী ঘাটের এপারে পাক বাহিনী চলে এসেছে ঘরবাড়ী জ্বালাতে জ্বালাতে তারা পাবনা প্রবেশ করছে সে এক বিভীষিকাময় মুহুর্ত। দুপুরের পরে ২ টায় ইপিআর ট্রেকনিক্যাল স্কুলে অবস্থান নেওয়ায় জনগন সর্তস্ফুর্ত ভাবে তাদের খাবার পরিবেশনা করলাে। তারা একটু স্থির হতেই মাওবাদি নকশালেরা পাবনার পূর্বদিকে এল,এমজির ফায়ার শুরু করে মনে হচ্ছিল আর্মিরা চলে এসেছে যে কারণে ইপিআর সদস্যদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হুকুম দিলাম। ডিসি, বগা চাচা ও এসপি সাহেবের পরিবার কুমারখালী চলে গেছে। আমি টেকনিক্যাল স্কুলের অফিস বন্ধ করে দিলাম। শহরে থাকা নিরাপদ নয়। অনেকেই কোমরপুরের দ্বীপচরের দিকে চলে যাচ্ছে। শিতলায় হাউজে পড়া কামানের গােলার আঘাত হানায় অন্ধকার মনে হচ্ছে। ওয়াজি উদ্দিন ও পরিতােষ সাহাকে পেলাম। ওদের সাথে নিয়ে চর কোমরপুর জব্বার মােল্লার বাড়ীতে গেলাম। হানাদার বাহিনী পুনরায় পাবনা শহর দখল করে নিল। রাতটা জব্বার মােলার বাড়ী কোন মতে কাটিয়ে কুষ্টিয়া কোট পাড়ায় আমার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিকির বাড়ী পৌছে দেখি ওদের পরিবার বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। খাওয়ার দাওয়ার করে ওদের সাথে নিয়ে আলম ডাঙ্গায় পৌছি। চুয়াডাঙ্গায় ডাক বাংলাে গেটে পৌঁছে শুনতে পাই ডি.সি সাহেব আমিনুল ইসলাম বাদশা ভাইকে বলছে কাদেরী-উদ্দীন কোথায়? বাদশা ভাই বলছে উদ্দীন মাধপুরে আর কাদেরী সাঁথিয়ায়। এ কথা শােনার পর ডিসি সাহেব কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলছে ওরা “বাচৰে না” আমি গেট থেকে আওয়াজ দেই আল্লাহ রহমতে বেচে আছি। তারা দৌড়ে এসে আমাদের বুকে টেনে নিল। তবে দুঃখের বিষয় সােবহান চেয়ারম্যান সত্যিই বেঁচে নাই। চুয়াডাঙ্গায় তখন ইপিআর আনসার মিলে ১৬০০০ সসস্ত্র জওয়ান মজুদ রাতে সার্বিক পরিস্তিতি নিয়ে আলােচনা হলাে। বগা চাচা, পাবনার ডিসি, কুষ্টিয়ার ডিসি, মেহেরপুর কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গার এসডিও, এসডিপিও, চুয়াডাঙ্গার এমপিএ সাহেব ঐ সময় উপস্থিত ছিল। চুয়াডাঙ্গার এমপি ডাঃ আসহাবুল হক ও মেজর ওসমান জানালেন তাদের হেফাজতে ৩ কোটি টাকা।
আছে। এ টাকার বিহিত ব্যবস্থা করার প্রয়ােজন। কোলকাতার অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানাতে হবে।
১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল। ঐদিন মেহেরপুর বৈদ্যনাথ তলায় আম্রকুঞ্জে গণ। প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথ গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থানটির নাম করন করা হয় মুজিব নগর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও উপ রাষ্ট্রপতি তাজ উদ্দীন আহম্মেদ ও প্রধান মন্ত্রী। খন্দকার মােস্তাক আহম্মেদ ও আইন সংসদীয় ও পররাষ্ট্র দফতর এ.এইস. এম. কামরুজ্জামান ও স্বরাষ্ট্র দফতর ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও অর্থ দফতর
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, সৈয়দ কামরুজ্জামান
কর্ণেল এম. এ. জি ওসমানিকে মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউসুফ আলী গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার। ঘােষণা পত্র পাঠ করেন ও শপথ গ্রহন পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর নেতবৃন্দ প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে কোলকাতা যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। সে কারণে ভােরে গেদে হয়ে ট্রেনে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কোলকাতার গিয়েই এ্যাডঃ আমজাদ হােসেন শ্রী রণেশ মৈত্রর সাথে দেখা করি। ইসাহক রােডের পশ্চিম বঙ্গের এমপিদের হােষ্টেলে প্রফেঃ আবু সাঈদ চৌধুরী, নিকট থেকে এম.এ. মনসুর সাহেবের ঠিকানা নিয়ে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হই। পর দিবসে আবু সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে বালিগঞ্জের সরােজ সেনগুপ্তের বাসায় এম,এ মনসুর ভায়ের সাথে দেখা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গায় অবস্থান রত সকলকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। রাতে এমপি হােস্টেলে বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগের করণীয় সম্পর্কে মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন। দর্শন হয়ে কৃষ্ণনগর বেতাই বিএসএফ ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে কুষ্টিয়া থেকে আনা ৩ কোটি টাকা কড়া পাহারায় রেখে কৃষ ও নগর সার্কিট হাউজে অবস্থান করি। কোলকাতা পৌছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩ কোটি টাকার
ব্যাপারে আলােচনা করি। আলােচনায় ৩ কোটি টাকা বিএসএফ ক্যাম্পে থেকে আনার জন্য আমাকে আবার বেতাই যেতে হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ আমিই প্রবাসী সরকারকে প্রথম আর্থিক সহায়তা দিতে সক্ষম হই।
পরিশেষে আমি বলতে চাই ৯৮০০০ হাজার সৈন্য আত্ম সর্শন করেছে বাংলার মাটিতে। যারা দম্ভ করে বলেছিল ২৪ ঘন্টার মধ্যে বলেছিল বাঙ্গালীকে ঠান্ডা করে দেবে, বাংলার মাটি পুড়ে তামা হবে। ইতিহাস স্বাক্ষী বাংলার মাটিতেই তাদের কবর হয়েছিল। সেই কুখ্যাত দম্ভকারী বেলুচিস্তানের কসাই টিকা খান, আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী, রাও ফরমান আলী, ইয়াহিয়া খানদের ইতিহাসের জঘন্যতম আস্তা কুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বদেশ ভূমিকে শত্রুমুক্ত করা হয়েছে। এখনও ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বােনের ত্যাগের কথা নিরবে নিভৃতে রয়ে গেছে। সেগুলােকে উদ্ধার করে। | তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। ২৯ মার্চ মাধপুর গ্রামে ডিলু, সুধায়, ইউসুফ চেয়ারম্যানরা ঢাল ফালা লাঠি নিয়ে পাক হানাদার দের রুখে দিয়ে এক জ্বলন্ত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাদের সেই ইতিহাস তুলে ধরে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে মুক্তিযােদ্ধা রবিউল আলম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মনের সংকীর্ণতা ফেলে দিয়ে যার যতটুকু অবদান, অবস্থান সে টুকু লেখা হলেই আমরা প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবাে। স্বাধীনতার ৩৯ বৎসর ধুসর স্মৃতির পাতা থেকে এটুকু পেলেই জাতি অনেক কিছু পাবে।