Translate

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

thumbnail

পাক বাহিনীর শেষ পরিণতি

২৯ মার্চ ২০০৮ শনিবার মাধপুর ঐতিহাসিক বটতলায় | জনাব সিরাজুল ইসলাম মন্টু কোম্পানী কমান্ডার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন সেখানে তিনি বলেছিলেন। মাধপুর রণাঙ্গন থেকে আবার শুরু করতে হবে- এ বার যুদ্ধ নয়। লিখতে হবে যুদ্ধের ইতিহাস। সে দিন ডিলু ভাই, সদরুল হক সুধা, ইউসুফ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে রুপপুর, পাকশীর অগনিত মুক্তিকামী মানুষ মাধপুর রণাঙ্গন সৃষ্টি করেছিল। মাধপুর আজ ইতিহাস। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছিল বাংলদেশে বহু মানুষ জন্ম নেবে কিন্তু মুক্তিযােদ্ধা জন্ম নেবে না। মাননীয় সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু ভাই মুক্তিযােদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার দাবী করেছিল। তার সে দাবী আজ বাস্তবায়িত হয়েছে। তেমনিভাবে মুক্তিযােদ্ধাদের লিখিত ইতিহাসও একদিন বাস্তবায়িত হবে যদি মুক্তিযােদ্ধারা সে দলিল সৃষ্টি করতে পারে।

কালের অমােঘ নিয়মে অনেক মুক্তিযােদ্ধা চলে গেছেন। আমিও একদিন থাকবাে না। মাধপুর রণাঙ্গন হবে মায়ের জরায়ু। দল মত নির্বিশেষে সকল বিভেদ ভুলে এখানে আসতে হবে। হৃদয় উজার করে মুক্তিযােদ্ধাদের কথা, স্বাধীনতার ঘােষকের কথা বলতে হবে। বিশেষ করে মাধপুরের রণাঙ্গনের কথা লিখতে হবে তাহলেই কেবল রাজু, ওহিদ, নবাব সহ সকল শহীদের আত্না শান্তি পাবে। ২৯ মার্চ আমি মাধপুরে ছিলাম না। মিছিল যখন মাধপুরে রওনা দেয় তখন আমি। ই,পি,আর সদস্যদের নিয়ে দাশুড়িয়ায় এ্যাম্বুস করি। সে সময় যার যা আছে তাই নিয়ে প্রতিরােধ যুদ্ধে শামিল হয়। মাধপুর ধেকে দাশুড়িয়া আসার পর পাক বাহিনী আমাদের প্রতিরােধের মধ্যে পড়ে। ককটেল মেরে ওদের একটি ট্রাক জালিয়ে। দেওয়া হয়। ট্রাকটি অনেকদিন দাশুড়িয়া সুলতানপুর রাস্তায় পড়ে ছিল। ঠিক ৩.০০ টার দিকে পাক বাহিনী কিছুতেই প্রতিরােধ ভেঙ্গে এগুতে পারছিলনা। তখন একটি ফাইটার বিমান তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং উপর থেকে অবিরাম গােলাবর্ষন শুরু করে। যে কারণে জনগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সে যুদ্ধে। রুপপুরের মহিউদ্দীন পা হারিয়ে এখনও বেঁচে আছে। সারাদিন অবিরাম যুদ্ধ করতে গিয়ে সবাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। গােলাবারুদ রসদ সম্ভার শেষ পর্যায়ে। পাক। আর্মিরা ভারী মেশিনগানের গুলি ছুড়তে ছুড়তে মারমি সুলতানপুর রাস্তা ধরে চলে। যায়। কিন্তু দরগা বাজার গিয়ে খালে পড়ে। কালটি ছিল গভীর এবং পানি ভরা। ঐ খাল ভরাট করে পার হতে প্রায় ৯.০০ টা বেজে যায়। তারা খুব ক্ষুধার্ত উভ্রান্ত ছিল। যে কারনে তড়িঘড়ি করেতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে চন্ডিপুর নামক গ্রামের

মধ্যে ঢুকে পড়ে। চন্ডিপুর গ্রামে নজরুল ইসলাম রুপা নামক ব্যক্তিকে পাওয়ার পর তার কাছ থেকে


পানি চায় তখনকার সময়ে সবাই কুয়ার পানি ব্যবহার করতাে। কুয়ার থেকে পানি নিয়ে যখন পিছনের ট্রাকটির কাছে যায় তখন সে দেখতে পায় আর্মিদের অনেকগুলাে ডেড বডি। তার মধ্যে কিছু আহতও আছে।

তাদের পানি খাওয়া শেষ হলে মুলাডুলি যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে দেয়। এ খবর মুলাডুলি প্রতিরােধ যােদ্ধাদের নিকট পৌছে যায়। রাত প্রায় ১০.০০ দিকে তার মুলাডুলি পৌছে। পৌছামাত্রই তাদের প্রতিরােধ যােদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। সেখানে তাদের প্রচন্ড ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। পরদিন সকাল বেলা দেখা গেল একজন পাক আর্মির অফিসার ইক্ষু ক্ষেতে শুয়ে আছে। জনতা তাকে ঘিরে ধরে মুলাডুলি হাটে বটগাছে ঝুলিয়ে গুলি করে মারে। এর পর নাটোর জেলার । ওলিয়া গ্রামে পৌছালে আবার তারা প্রতিরােধ যােদ্ধাদের এ্যাম্বুসে পড়ে। কথিত আছে মেজর আসলাম বােরখা পড়ে পায়ে হেটে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। জনতা তাকে ঘিরে ফেলে এবং হত্যা করে। নাটোরের ময়না গ্রাম নামক স্থানেও তাদের প্রতিরােধ করা হয়। এখানে তারা ২২ জন বীর মুক্তিযােদ্ধাকে শহীদ করে। পানাে থেকে মাধপর, দাশুড়িয়া, মুলাডুলি, ওয়ালিয়া, ময়না গ্রাম নাটোর প্রতিরােধ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে যায়। ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ১৫০ জনের মধ্যে মাত্র ১৮ জন সৈন্য জীবিত ফিরতে পেরেছিল। সেদিন ছিল ১লা এপ্রিল, ১৯৭১। বাঙ্গালীদের সাহসী মনােবল খালি হাতে এতবড় একটি সুশিক্ষিত বাহিনীকে কিভাবে পরাস্ত করেছে এতবড় ঘটনা অন্য কোথাও ঘটেছে বলে আমার জানা নাই। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এই সমস্ত যুদ্ধগুলাের ইতিহাস জ্বলজ্বল করবে।


বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১

thumbnail

যেভাবে ২৯শে মার্চ শুরু



পাবনায় পাকিস্তান সেনা বাহিনীর দুরাবস্থার জেনে তাদের উদ্ধারের জন্য মিলিটারী কনভয়গুলাে মাধপুর হয়ে পাবনায় যাওয়ার পর এ খবর পৌছে যায়  পাকশী মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পে। যারা পাবনার যুদ্ধ শেষ করে পাকশী ফিরে রেলওয়ে মাঠে সমাবেশ ডেকেছিল। সে সমাবেশে তখন হাজার হাজার তরুণ স্কুলিং হয়ে ফুটছে। সেই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শামসুর রহমান শরীফ (ডিলু), কাজি সদরুল হক সুধা, ইউসুফ চেয়ারম্যান, সিরাজুল ইসলাম (মন্টু), জাফর সাজ্জাদ (খিচু), আব্দুর রহিম (টিন) রশিদউল্লাহ, চান্না, আনােয়ার হােসেন (জন), আব্দুল খালেক, ঈসা হক, সেলিম, গাফফার সহ হাজার হাজার ছাত্র জনতা। এ খবর শােনার পর কেউ আর স্থির থাকেনি। তখন চলছিল জ্বালাময়ী বক্তব্য। উপস্থিত জনতার রক্ত তখন টগবগ করে ফুটছে। ধীরে ধীরে মঞ্চে উঠে এলাে হাবিবুর রহমান (রাজু)। শান্ত অথচ ধীর তেজদীপ্ত কণ্ঠে ঘােষণা করলাে বার বার বাঙ্গালীর সাথে বেঈমানী করে তারা আমাদের ক্ষমতায় যেতে দেয়নি। আজ ওরা বাঙ্গালী। নিধনের যাবতীয় নীল নকশা তৈরী করে টিক্কা খানকে লেলিয়ে দিয়েছে। ওদের সাথে আর আপােষ নয় মাধপুরের মাটিতে ওদের প্রতিরােধ করা হবে। রক্ত যতই লাগুক দেব। তবে বন্ধুরা আজকে আমিই প্রথম রক্ত দেব। আপনাদের ভয় নেই। আপনাদের যার যা আছে তাই নিয়ে মাধপুর অভিমুখে যাত্রা করুন। নেতাদের। ঘােষণা অনুযায়ী পাকশী, রূপপুর সহ অন্যান্য গ্রামের লাইসেন্স করা বন্দুকগুলাে তুলে আনা হলাে। এভাবে ১১টি বন্দুক যােগাড় হলাে। এবার বিদায়ের পাল। আস্তে আস্তে ধেয়ে আসছে মুক্তি পাগল মুজিব সেনার দল। সাহাপুর, মহাদেবপুর, আওতাপাড়া, বাশেরবাদা, লক্ষ্মীকুন্ডা চরাঞ্চলের লাঠিয়াল বাহিনী। আকাশ বাতাস সােগানে প্রকম্পিত করে মাধপুরে হাজির হলাে। হাজারাে মানুষের পদচারনার আঘাতে কাচা রাস্তার ধুলায় কাউকে চেনা যাচ্ছে না। ডিলু, সুধা, রাজু সহ। অনেকেই বন্দুক নিয়ে চলে গেলেন দক্ষিণ পাড়ার বট গাছ তলায়। ইউসুফ চেয়ারম্যান, এম,এ মনসুর, মন্টু ও মাঈন উদ্দীন মিয়া সহ অন্যান্য প্রধানকে ডেকে গাছ কাটার নির্দেশ দিলেন। তাদের হুকুমে দা-কুড়াল নিয়ে সবাই বেরিয়ে এলাে। গাছ দিয়ে রাস্তায় বেরিকেড দেওয়া হলাে। একাজে মাধপুরের বৌ-ঝিয়েরা অগ্রণী ভূমিকা নিল। এর মাঝে কে কোথায় পজিশন নেবে ডিলু ভাই তা আগেই ঠিক করে দিয়েছিল। চরকাতরা থেকে শুরু করে মাধপুরের বুক চিরে পাবনা-পাকশী রাস্তা পশ্চিমে রেখে সােজা দাশুড়িয়ার দিকে চলে গেছে কাঁচা রাস্তা। যার দু'ধারে তেমন বাড়ী ঘর নেই। যে দু'একটি বাড়ী ছিল তাও রাস্তা ছাড়া বেশ দূরে।। পাকিস্তানী সরকার কখনও এই কাচা রাস্তা সংস্কার বা মাটি দিত না। যার কারনে

বর্ষা মৌসুমে রাস্তাগুলি ভেসে যেত। পানি কমার সাথে সাথে রাস্তার মধ্যে নর্দমার মতাে সটি হতাে। রাস্তার দু’গাড়িতে জন্ম নিত অসংখ্য ছােট বড় গাছ-গাছালী। যা জঙ্গল হিসাবে পরিচিত হত। আজ যেখানে রুশনাই ও আকাল প্রাং-এর বাড়ী সে জায়গায় রাত হলে কেউ যেত না। আজ যেটা মাধপুরের বাজার তার দু'পাশেই ছিল কায়েফলা বা হামঝুমের জঙ্গল। এমনি জঙ্গলের মধ্যে সবাইকে পজিশন নিতে দেখা গেল। ঐ সময় আমরা প্রতিটি বাড়ীতে ট্রেন্স কাটার নির্দেশ দিলাম । মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী মাটির নিচে পুঁতে রাখা হলাে। আগেই চরমাধপুর গ্রামের আমজাদ হােসেন (টানা), আমি, ভুলু মশাল মিছিল করে জনগণকে স্বাধীনতার ডাক দিয়ে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলাম। সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে পাকশী-রূপপুরের মুক্তিযােদ্ধাদের খাবার পরিবেশনের অনুরােধ জানালাম। চৈত্র মাসের খরায় পানি সরবরাহ করার জন্য অনুরােধ করলাম। অনুরােধের সাথে সাথে মেয়েরা পানি খাওয়ানাের ব্যবস্থা করলাে। তখন টিউবওয়েল কারাে বাড়ীতেই ছিল না। কুয়ার পানিই ছিল একমাত্র ভরসা। সকাল ৮.০০ থেকে দুপুর ১.০০ টা পর্যন্ত পাকবাহিনীর আসার সাড়া না পেয়ে অনেকেই চলে যেতে চাইল। ইউসুফ চেয়ারম্যান বন্দুক হাতে নিলুর পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে রইল। যে কারণে চলে যাওয়ার সাহস কেউ দেখায়নি। বেলা ২.০০ টার মতাে হবে। হঠাৎ গুলির শব্দ। বটতলার শিকড়ে তখন রাজু। তার ওপারে নানু মােল্লার খাদে ডিলু, সুধা, খিছু অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হিসাবে ঐ জায়গাই তারা বেছে নিয়েছিল। প্রথম গুলির শব্দ শােনার সাথে সাথে দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত এক যােগে গর্জে উঠলাে রাইফেল গুলাে। শুরু হলাে সম্মুখ যুদ্ধ, প্রতিরােধের যুদ্ধ, মাধপুরের যুদ্ধ।

এরপর পাকবাহিনীর রিকয়েললেস রাইফেল মর্টার শেল ও ভারী মেশিনগানের ফায়ার শুরু হলাে। শব্দ তরঙ্গে জীবনের এই প্রথম শব্দগুলি শুনছি। তীর, ধনুক, বল্লম হাতে থাকা মানুষগুলাে কে কোথায় চলে গেছে কিছুই বুঝলাম

। ফায়ারের সাথে সাথে দক্ষিণ পাড়ায় আগুনের লাল আভা বিচ্ছুরণ হচ্ছে। আস্তে আস্তে দক্ষিণ থেকে পাক আর্মিরা বাজারের উপর চলে এলাে। ওহিদুল ইসলাম, নবাব আলী, আব্দুল গফুর তাদের পজিশন ছাড়েনি। এখন যেখানে সাত্তারের বাড়ীর রাস্তা সংলগ্ন ঝােপের আড়াল থেকে ৩০৩ রাইফেল ও ককটেল চার্জ করার সাথে সাথে কিছু পাক সেনা নিহত হলাে। পিছনে থাকা আর্মির একটি গ্রুপ জঙ্গল ঘিরে ধরে ফায়ার শুরু করলাে।

তাদের প্রতিটি ফায়ারে আগুনের শিখার মতাে বের হচ্ছিল সেখানেই ওরা ঐ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করলাে। পরে দেখলাম ওহিদের দুটি হাতই পােড়া। পাক আর্মিরা যখন দেখলাে পুকুরের পূর্ব পার্শ্বে আকাল প্রামানিকের বাড়ীর রাস্তায়। কাঠের গুড়ি দিয়ে বেরিকেড। মুনসুর সাহেবের বাড়ীর ছাদ থেকে গাদা বন্দুকের ফায়ার আসছে তখন ওরা মন্টু সাহেবের বাড়ী তাক করে মর্টারশেল ও ভারী মেশিনগানের গুলি ছুঁড়তে শুরু করলাে। আরেকটি গ্রুপ ঢুকে পড়ে হামির উদ্দীনের বাড়ীর ভিতরে। সেখানে হামির উদ্দীনকে পেয়ে গুলি করে হত্যা করে। ঐ সাথে। হামির উদ্দীনের বেটার বৌ রহিমা খাতুনও গুলি বিদ্ধ হয়ে আহত হয়। প্রতিটি জায়গা থেকেই ওদের প্রতিরােধ করা হচ্ছে এবং গুলি ছোড়া হচ্ছে যে কারণে ওরা খুব দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে। পাক আর্মিরা যখন ফরমান সরদারের বাড়ীতে তখন। দেখলাম ঐ বাড়ী থেকে ধােয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে উপরে উঠছে। অনেকেই পাকা বাড়ী পেয়ে নিরাপত্তার আশায় মুন্টু সাহেবের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছিল। ছুনু চারার ঘরটি সম্মুখে ছিল । সেলিং-এর আঘাতে ঘরটি দুমড়ে মুচড়ে মাটির সাথে মিশে যায়। ঐ ঘরটিতে ছুনু চাচার ৮০ বছরের অন্ধ মাতা থাকতেন। গুলির প্রচন্ডতায় সবাই নিজের জীবন নিয়ে পালিয়ে গেলেও ঐ বুড়ি ঐ ঘরেই ছিল। ঐ বাড়ীতে ঢুকেই দেখলাম কঠিন নিরবতা। কিরণ, দীপু কাঁদছে। আমাকে দেখে ওরা ওর নানীর খবরটা জানিয়ে তাকে বের করতে অনুরােধ করলাে। কোন কিছু চিন্তাভাবনা না করে পৈঠার মধ্যে শরীর ঢুকিয়ে ভিতরে গেলাম। গােঙড়ানীর শব্দ পেলাম । অলৌকিক ভাবে বুড়ি বেঁচে আছে। তাকে বের করে এনে পানি খাওয়ানাে হলাে। মুনসুর সাহেবের ঘরে ঢুকে দেখি রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে। সেলিংএর আঘাতে ঐ ঘরে থাকা কমবেশী সকলেই আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। | আজিজা রহমান টুনু, স্বামী- ওবায়দুর রহমান, প্রফেসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাধপুরে এসেছিল। তারাও মারাত্বক জখম হয়েছে। চরমাধপুরের মনােয়ার হােসেন আলােক সেই আঘাত প্রাপ্ত হলাে। প্রচন্ড সেলিং-এর মধ্যে সবাই যখন বাড়ীর পিছন দিক দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গিয়েছিল তখন আহত অবস্থায়। অনেকেই ঐ ঘরের মধ্যে পড়ে ছিল। ফরমান সরদারের বড় বাড়ীটির আগুনও আস্তে আস্তে নিভে গেছে। তার আপন জনেরা বুক চাপড়িয়ে বিলাপ করছে। আমরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্ধ পিতাকে নিয়ে যেতে পারেনি। পরে দেখা গেল ৮০ বছরের ফরমান সরদার আগুনে পুড়ে কাবাব হয়ে পড়ে আছে। প্রতিরােধ যুদ্ধে দাশুড়িয়ার জফি মালিথাও এসেছিল। এক সময় ভারী মেশিনগানের গুলির কাছে হার মানতে হয় তাকে। যেভাবেই হােক তিনি পালাতে পারলেও ঢাল, ফালা, সড়কী হাতে নিয়ে শহীদ হয়েছিল জোতগাজী গ্রামের তাজের, নবীল উদ্দীন, লস্কর সরদার। আমার মনে হয়েছিল বটতলায় পজিশনরত ডিলু ভাই, সুধা, খালেক, খি, টিনু, সেলিম তারা কেউ বেঁচে নেই। তবুও খােদার অসীম মেহেরবানীতে তারা বেঁচে ছিল। একে একে রাজু, রাজ্জাক, গফুর, নবাব ও নুরুলের লাশগুলােকে আনা হলাে। দরজার এক পাট খুলে সেগুলাের উপরে করে। একে একে রুপপুর, পাকশীর লাশ গুলােকে নিয়ে যাত্রা করা হলাে। কে কিভাবে পালিয়েছে বুঝেনি। মিলিটারীরা চলে গেছে। গ্রামে কোন মানুষ নেই। পােড়া ঘরের বাঁশগুলাে তখনও ফুটছে। গােয়ালের গরুগুলাে পুড়ে কাবাব হয়ে মাংসের দলা পড়ে আছে। কলসীর পানি ঢেলে মায়ের সান্তনা খুঁজছে। এতক্ষণ যে গ্রামটিতে প্রাণচঞ্চল ছিল। “জয়বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধর। বাংলাদেশ স্বাধীন কর” ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত ছিল। সেই গ্রামটি এক নিমিষে বিরান জনভুমি। বাতাসে বারুদের গন্ধ। হায়রে! যুদ্ধ। মা তার একমাত্র ছেলেকে পাগলের মতাে খুঁজছে। কোলের শিশুটি দুধ না পেয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। এক ফোটা পানির জন্য গলা শুকিয়ে কাঠ। একি করেছে পাকিস্তানের সীমারের গােষ্ঠী। কারবালার পৈশাচিকতাকেও হার মানিয়েছে। মাধপুরের আকাশে-বাতাসে আজ শুধু মাতমের দৃশ্য। এর কি কোন সান্তনা আছে? সান্তনা একটাই যত রক্ত লাগে দেব, তবুও বাংলাকে মুক্ত করে ছাড়বাে। ইনশাল্লাহ।

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

thumbnail

দাপুনিয়া হাট অপারেশন



 ট্রেনিং শেষ হলাে। সেদিন দেখলাম কমান্ডার শাহাজাহান তার ট্রপ নিয়ে মাধপুরে হাজির। বাবু,মেছের, শাহাজাহান সকল মুক্তিযােদ্ধাকে দাড় করিয়ে ছােট ভাষন দিলেন। প্রথম অপারেশন আজ এ অপারেশনে সাফল্য আনতে হবে মনােবল দৃঢ় থাকতে হবে। খবর পাওয়া গেল। নত মালেরা দাপুনিয়া হাটে এস খাজনা আদায় করছে। শুধু খাজনা নিয়েই তারা খান্ত হচ্ছে না বিক্রিত মালামালের তিন ভাগের এক ভাগ হিস্যাটাও নিচ্ছে যারা দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে। তাদের ভাগ্যে ঘটছে চরম নির্যতন। অনেকেই বাবু কমান্ডারকে এদের প্রতিহিত করার অনুরােধ করছে।

এই অনুরােধের পেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হলাে দাপুনিয়া হাট অপারেশনের। চর। মাধপুরের টিপু ভাইয়ের গয়নার নৌকা ঠিক করা হলাে ৪টার দিকে দাপুনিয়া। হাটের উদ্দেশ্যে রওনা করা হলাে। বর্ষার পানিতে চারি দিকে থৈ থৈ পানি। কাচা রাস্তায় চলাচল করা কঠিন। এরি মাঝে নৌকা থামলাে মানুর বটতলায়। নেমে পরি সাফিক পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ ম্যাপ অনুযায়ী পজিশনে চলে গেলাম। একটি গ্রুপে ৫ জন করে পজিশন নেওয়া হলাে। আমি সাইদাল, মনসের,পাইনেছ, আমছের পজিশন নিলাম হাসপাতালের সামনে। গান নিয়ে দৌড়ে হাটে ঢােকার কারনে হাটের মধ্যে ত্রাস হলাে যে কারনে মানুষ ছােটা ফুটি শুরু করলাে। এই সুযােগে নকসালেরা জনতার মাঝেই হারিয়ে গেল। নিরাশ হয়েই ফিরতে হলাে।


thumbnail

স্বাধীনতা যুদ্ধ ও নারী মাতা



৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষনের মধ্য দিয়েই শুরু হলাে স্বাধীকারের লড়াই। বাঙ্গালী জাতি সত্ত্বার টিকে থাকার লড়াই। এ লড়াই কবে শেষ হবে কেউ তা জানে না। ভারী মেশিনগান, রিকয়েললেস রাইফেল, মর্টার সেল অথবা হিংসার বহিপ্রকাশ ঘটিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নাপাম বােমা মেরে ঝলসে দিবে বাঙ্গালীর দেহ। মাটি পুড়ে তামা হবে। ক্ষত বিক্ষত হবে নারী দেহ। যুদ্ধ মানেই রুটি, যুদ্ধ মানেই রাইফেল, যুদ্ধ মানেই আওরাদ। পশ্চিম রণাঙ্গনের মাধপুর এর ব্যতিক্রম ছিল না। প্রগাঢ় অন্ধকারে শকুনের নখের আচড়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে এ মাটির অনেক মা অনেক বােন। নিরবে নিভৃতে আজও কান পাতলে শােনা যায়। তাদের আর্তনাদ। সেসব বিরঙ্গণাদের কথা, পরিচয় কখনও প্রকাশ করা সম্ভব হবে। । লিখা হবে না ইতিহাস। দিতে পারব না বিরঙ্গনা খেতাব।

কেমন ছিল পশ্চিম রণাঙ্গনের মাধপুর, নাজিরপুরের নারী সমাজ। স্বাধীনতার মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য তারা কতটা উজার করে দিয়েছিল সেসব কথা না লিখা হলে আমরা বড় অপরাধী হয়ে যাব। তারা নিজেরা পােড়া চাউলের ভাত খেয়েছে কিন্তু মুক্তিযােদ্ধাদের সে ভাত কখনও খেতে দেয়নি। মাতৃ স্নেহের পরশে নিজ সন্তানের মতাে দেখেছে, তাদের কাপড় ধুয়েছে, ফেলে রাখা অস্ত্রগুলাে স্বযতনে তুলে রেখেছে। সারা রাত জেড়ে পাহারা দিয়েছে। দেশের স্বাধীকারের জন্য, সন্তানদের জন্য, মুক্তিযােদ্ধাদের জন্য রােজা রেখেছে। এই বিদুষী মাতাদের বিচক্ষনতায় অনেক মুক্তিযােদ্ধা প্রাণেও বেচেছে। শেল্টার বদল করে গভীর রজনীতে মুক্তিযােদ্ধারা অন্য থানায় চলে যাবে এক মুঠো ভাত না খেয়ে যাবে তাই কি হয়? ঘুমের আড়ষ্ঠ ভেঙ্গে কষ্টের বেড়া জাল তুচ্ছ করে ঐ রাতেই চারটে ডাল ভাত করে মুক্তিযােদ্ধাদের সামনে তুলে ধরেছে। সেই মুক্তিমাতাদের কখনও কি ভােলা যায়? মনে পড়ে ডাক্তার আবুল হােসেনের স্ত্রী জমেলা খাতুন, মাঈন উদ্দীনের স্ত্রী আছিয়া খাতুন, এম.এ মুনসুরের স্ত্রী রােকেয়া মুনসুর ও মাতা শুকুরন নেছা, সিরাজুল হকের স্ত্রী সারা খাতুন, আমজাদ হােসেন জান্টুর স্ত্রী মনােয়ারা বেগম, রওশন প্রাং-এর স্ত্রী রঙ্গ খাতুন, চরমাধপুর গ্রামের শহীদ মকবুল হােসেনের স্ত্রী আকরামা খাতুন, ফয়জদ্দীন প্রাং-এর স্ত্রী তাহিরন নেছা, আত প্রাং-এর স্ত্রী আনছারা খাতুন, টিকরী গ্রামের ইউনুস খাঁর স্ত্রীর, নাজিরপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (হাবু)-র স্ত্রী শামসুন্নাহার, আব্দুল হামিদ খান সাহেবের স্ত্রী জমিলা খাতুন প্রমুখ স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে জাতি তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।


thumbnail

এক নজরে যুদ্ধকালীন কর্মকান্ড,

 



১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

পাক বাহিনী মাধপুর গ্রাম আক্রমন করে। সেদিন ডাঃ আবুল হােসেনের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মাধপুর গ্রামের দক্ষিণ পাড়ার পুলিশ সদস্য মহিউদ্দীন শহীদ হন।

২৫ সেপ্টেম্বরঃ |

ডাঃ আবুল হেসেনের ছােট ভাই মকবুল হােসেন মন্ডল তিনগাছা গ্রামে মাওবাদী নকশাল কর্তৃক শহীদ হন।

৩০ সেপ্টেম্বরঃ

মাওবাদী নকশালেরা মাধপুর গ্রাম আক্রমন করে মাঈন উদ্দীন মিয়ার বৈঠকখানা ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং লটপাট করে।

২৪ অক্টোবরঃ

| তিনগাছা বাবুর বাগানে মুক্তিযােদ্ধাদের সাথে মাওবাদী নকশালদের সাথে। যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা রাধানগরের মহরম ও টিকরী গ্রামের ছানা শহীদ হয়।

২৭ নভেম্বরঃ

শানিরদিয়াড় চরে নকশালদের সাথে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধে মুক্তিযােদ্ধা সেলিম সহ অনেকেই নিহত হয়। দুলাল হােসেন, শরিয়ত আহত হয়। চরাঞ্চল পুড়িয়ে দেয়।

১লা ডিসেম্বরঃ

নাজিরপুর গ্রামে পাক বাহিনী গণহত্যা ও লুটপাট চালিয়ে ৬১ জন মুক্তিকামী। মানুষকে হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বরঃ

পাক বাহিনী চরমাধপুর গ্রামে প্রবেশ করে ঘর বাড়ী জ্বালিয়ে ১৬ জন গ্রাম বাসীকে হত্যা করে। ঐ দিন আমার বাড়ীটি জ্বালিয়ে দেয়।

১ ডিসেম্বরঃ

নাজিরপুর নজরুল ইসলাম (হাবু)-ও বাড়ীতে মুক্তিযােদ্ধা লিডার সাঈদ আক্তার ডিডু ও ইসরাইল হােসেন মেহেরের নিকট তৎকালীন পাবনার ডিসি ও এসপি অস্ত্র সমর্পণ করেন। ঐ দিন চরকমরপুর রফিকুল ইসলাম বকুলের সাথে মিটিং করা হয়।


রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১

thumbnail

পাবনায়’৭১ মুক্তিযুদ্ধ

 

পাবনা জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে যাদেয় নাম উল্লেখ না

করে কোন তথ্যই উপস্তাপন করা কঠিন

তাদের মধ্যে অনেকেই।

ইতিমধ্যে চলে গেছে মুষ্টি মেয় কিছু নেতা আছেন যা কালের বিবর্তনে জরা ব্যাধী আক্রান্ত হয়ে রহিত

হয়ে আছেন।

একটি মহানুভত্ব নেতা, স্বাধীনতা সংগ্রামী মুক্তিযােদ্ধা কালের স্বাক্ষী হয়ে এখন বেঁচে আছেন তিনি

আমাদের সকলের প্রাণ প্রিয় জনাব গােলাম আলী কাদেরী।

পাবনা মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান নিয়ে তারি লেখনি আগামি প্রজন্মের জন্য লিপিবদ্ধ করা হলাে।

৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু তার কালজ্বয়ী ভাষণে স্বাধীনতার ঘােষণা দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে যে দিক দর্শন দেন

তার মর্মাথ পাবনাবাসী বুঝেছিল বলেই সেদিন যার যা আছে তাই নিয়েই পাবনা থেকে পাক হানাদার

নিধনে ঝাপিয়ে। পড়েছিল।

এবং পাবনাকে মুক্ত করেছিল।

২৫ই মার্চ বাঙ্গালী নিধনের নীল নকশা তৈরি করে সমগ্র বাংলাদেশে। অপারেশন সার্চ লাইটের মাধ্যমে শুরু

হলাে রক্তের হলি খেলা।

পাবনাও এর ব্যতিক্রম ছিলনা। পাবনা জেলা ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নের মধ্যে বিবাদের জের ধরে রাধানগর

ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান খন্দকার নূরুল ইসলাম (নূরু খন্দকার) বাড়ীর ভিতরে থেকে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুস শুকুরকে

গুলি করে হত্যা করে।

রাত ৮ টার। মত হবে। আওয়ামি লীগের পাবনা জেলার সভাপতি আমজাদ হােসেন সাধারণ সম্পাদক

আঃ রব বগা মিয়া

সদর থানা সভাপতি আমিন উদ্দীন সাধারন সম্পাদক গােলাম আলী কাদেরী ও আলতাফ হােসেন

সংগঠনিক সম্পাদক

দফতর সম্পদ এ কে এম হাসান হীরা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ শাহজাহান প্রমুখ

। নেতারা হামিদ রােডের আওয়ামি লীগ অফিসে একত্রিত হয়। জনগন শুকুর হত্যার তখন দারুন ক্ষুদ্ধ।

এমন সময় পাবনার ডিসি, নূরুল কাদের খান আমজাদ হােসেন বগামিয়া, আমিন উদ্দীনকে তার বাংলােয়

ডেকে পাঠায়

। ক্ষুদ্ধ জনগনের মনােভাব যেন কিছুতেই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকার কথা বলে চলে গেল

। পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে চিন্তা করছি তখন রাত ১২টা বেজে গেছে তখন তারা এসে জানালাে সমগ্র পূর্ব

পাকিস্থানে আর্মি ক্র্যাক ডাউন। করেছে। আমরা তখনও জানতামনা নিরাপরাধী নিরস্ত্র, পুলিশ ও ইপি আরদের।

নিঃশংস, পৈশাচিক ও বর্বর হত্যা কান্ড চালিয়েছে রাজারবাগ ও পিল খানায়। আমজাদ ভাই বললাে আগামি কাল

রাজশাহী থেকে ১ কোম্পানী পাকিস্তানী সেনা পাবনায় আসবে। তােমরা যার যার বাড়ী গিয়ে পরিবার পরিজনদের নিরাপদ স্থানে রেখে এসাে। কর্মিদের বলে দাও দাশুড়িয়া, নগর বাড়ী রাস্তায় শক্ত বেরিকেটের বেষ্টনি তৈরি করতে। এবং পুলিশেরা প্রস্তুত থাকে। রাত ১২টা থেকে ভাের ৫টা পর্যন্ত জনগনকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য মাইকের প্রচার অব্যাহত রাখা হলাে। আমরা। উৎকণ্ঠার মধ্যে ভাের পর্যন্ত অপেক্ষা করে ছাত্র লীগের সভাপতি আঃ সাত্তার লালুকে নির্দেশ দেওয়া হলাে, আমজাদ হােসেন, আঃ বর বগা মিয়া, এম, মনসুর আলী সহ সকল নেতারা তাদের পরিবারসহ নিরাপদ স্থানে রাখতে চলে যায়। সকাল হয়ে গেছে। তারু নন্দীর দোকানে গেলাম নাস্তা করতে। নাস্তা করছি এমন সময় দেখলাম হামিদ রােড ধরে হানাদার বাহিনীর কয়েকটি কনভয় কাচারির দিকে চলে যাচ্ছে। কনভয় গুলাে কোন দিকে যাচ্ছে জানার জন্য পাহারাদারদের। সদ্দার ছােবহান পাঠান খানকে কাচারির দিকে পাঠালাম। আধা ঘন্টা পর ও এসে খবর দিল একটি কনভয় নগর বাড়ী রােড দিয়ে চলে গেল আর একটি বিসিকে অবস্থানের জন্য চলে গেছে। এর মধ্যে জানা গেল আমজাদ ভাইও বগা চাচার। বাড়ীতে হানা দিয়ে তাদের না পেয়ে মুজাহিদ ক্লাবের ওখানে দাড়িয়ে আছে। লালু। জানাল আমিন উদ্দীন বাবু মিয়ার বাড়ীতে পালিয়ে আছে। আমজাদ মনসুর বগা । মিয়া তাদের পরিবার নিয়ে দ্বিপচর বিশ্বাসদের বাড়ীতে অবস্থান নিয়েছে। তার নন্দীর দোকান থেকে নাস্তা সেরে আমি, উদ্দীন ভাই, লালু, আলতাফ ভাই ইসলামিয়া কলেজের দিকে (বুলবুল কলেজ) যাওয়ার পথে মেজর জাবেদকে পেলাম। তখন ৯টা বেজে গেছে মুজাহিদ ক্লাব সংলগ্ন বাড়ী ছাত্রলীগের গােলাম হায়দার বাবলু জানালাে পাক হানাদারেরা ২ জন পথ চারিকে গুলি করে মেরেছে।। বেপরােয়া গুলি বর্ষন শুরু করেছে। সে আমাদের কাছে তাদের প্রতিরােধ করার হুকুম চাইলাে। তাকে পরবর্তী নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলে ওখান থেকে চলে গেলাম। সিদ্ধান্ত মােতাবেক আমরা ৩ জন চলে গেলাম মালঞ্চী গ্রামের চেয়ারম্যান ইউসুফ খান এর বাড়ীতে মেজর জিয়ার ঘােষণা শুনছিলাম রেডিওতে। তিনি বলেছিলেন আমি জিয়া বলছি, আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। পক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘােষণা করছি। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না বঙ্গবন্ধু। আমাদের মাঝেই আছে ইত্যাদি। পাশাপাশি রেডিও পাকিস্তানে থেকে সামারিক। শাসক ইয়াহিয়া তার ভাষণে আওয়ামি লীগকে দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ববিনষ্ট কারি শত্রু আখ্যা দিয়ে বলেন Sheikh Majib is a Traitor. His party Awami League Shall not be Spared Unpunished তার রেডিও বারবার প্রচার করতে লাগলাে। বিকালে দিকে মাহমুদপুর ইউসুফ | খান চেয়ারম্যানের বাড়ী থেকে ফিরে এলাম। পাবনা শহরে থাকা নিরাপদ নয় যে কারণে পরিবারের সবাইকে রাঘবপুরের খামার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে সবে মাত্র। ঘরে গিয়ে কাপড় পালটাচ্ছি সে সময় এক ট্রাক আর্মির গাড়ী আমার বাড়ীর সম্মুখে। দাড়াল। বেগতিক দেখে দোতালা থেকে লাফ দিয়ে পাচিল টপকিয়ে বেলতলা রােডে চলে গেলাম। রাস্তা ফাকা কেউ প্রয়ােজন না হলে বাড়ী থেকে বের হচ্ছেনা। এ সময় কি ভাবে খবর পেয়ে পুলিশের ডিএসপি গাড়ী নিয়ে চলে এলাে তিনি জানালেন পাক আর্মিরা পুলিশের ম্যাগজিনের দখল চাচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা কি করবে। এসপি সাহেবের সাথে আলাম করে সন্ধ্যার পর ফয়সাল। জানাব বলে উনাকে বিদায় দিলাম।সন্ধ্যায় এসপি সাহেবের বাসায় ঢুকতেই দেখি সম্মুখের মাঠে যুই মেম্বার, হাবিব ফারুক, সন্টু, শুকটা সহ প্রায় ২০০ জন ছেলেরা জড়াে হয়ে মিটিং করছে। তাদের কাছে আমজাদ ভায়ের খবর জানতে চাইলে তারা জানালে তিনি দ্বীপ চরে বিশ্বাসদের বাড়ীতে আছে। ইতিমধ্যে ওয়াজিউদ্দীন খান এসে জানাল ডিসি ও এসপি সাহেব কুঠিপাড়া হাসান বিশ্বাসের বাড়ীতে আছে। সেখানে নেতারা সবাই আছে সন্ধ্যার পর আলােচনা করে সিদ্ধান্ত দেবেন। উদ্দীন ভাইকে সাথে নিয়ে কুঠিপাড়ায় গেলাম। যেয়ে দেখলাম, ছাত্রলীগের রফিকুল ইসলাম বকুল, ইকবাল, আহম্মেদ করিম সহ অনেকেই উপস্থিত আছেন। ম্যাগজিন হাত ছাড়া করা, যাবেনা। তিনি একটি ম্যাপ তৈরি করে পুলিশ ব্যুহ রচনা করলেন। জজকোর্টের পশ্চিম ও উত্তর বারান্দায় ২ জন পুলিশ, ছাদে ২ জন, পুলিশ লাইনের দোতলায় ২ জন। জেল খানার গেটে সারিবদ্ধ ১০ জন তাদের সাহায্য করার জন্য ১২ জন করে ডিউটি করবে। আর, ও মমতাজের কাছে এ ম্যাপ প্রদান করে তা তামিল করার আদেশ দেন। একজন অফিসারের নেততে ১ ট্রাক পাক আর্মিরা এসে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে। ম্যাগাজিনের চাবি চায়। তখন পুলিশের গুলির জবাব পেয়ে আর্মিরা পিছু হটে। দখল নেওয়ার জন্য। তারা আবার ম্যাগজিন খানায় চলে আসে এদিকে পুলিশের সাথে হাজার হাজার জনতা যােগ দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। যে যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাস্ত হয়ে বিসিকে চলে যায়। এদিকে স্বাধীনতা কর্মী মুক্তিবাহিনী ম্যাগজিন খুলে সমস্ত হাতিয়ার নিজেদের দখলে নেয়। ২৮ তারিখে বেলা ১১ টার দিকে দেওয়ান মাহাবুবুল হক, হাবুল, বাবু মিয়া, ইকবালের নেতৃত্বে হাজার জনতা মিলে টেলিফোন একচেঞ্জ অবস্থান রত পাক আর্মির উপর আক্রমন চালায়। সেখানে ৩৬ জন সৈন্য ছিল, ইকবাল ও বকুল কৌশলে পাক আর্মিদের এলএমজি কেড়ে নেয়। ঐ এলএমজি দিয়েই অবস্থান রত সকল সৈন্যদের হত্যা করা হয়। মসলেম প্রাং মােড়ে একতলা বিল্ডিং এ ১১ জন পাক সৈন্য ছিল। পাবনা থানার ওসি মােয়াজ্জেম হােসেনের নেতৃত্বে পুলিশ জনতা, উত্তর পাশে মহসিন বেগ আজিজল মাষ্টার বুলবুল ও জনতা এক যােগে আঘাত হানে। ভারি ফায়ারে এলাকা। প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। ২ দিনের আক্রমনে পাক বাহিনীর ১১ জন সৈন্য নিহত হয়। ওখানে ভারি মেশিন গান চাইনিজ রাইফেল সহ ১১টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ২৭ মাটি ও পাবনা টেকনিক্যাল স্কুলের দোতালায় আওয়ামি লীগের নেতৃবৃন্দও প্রশাসন। মিলে একটি পাবনা জেলা মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় তারা হলেন

সভাপতি ও জনাব আমজাদ হােসেন (এমএনএ) এই সংগ্রাম পরিষদের নেতা হলেন

সহ সভাপতি জনাব আব্দুর রব বগা মিয়া

সচিব ঃ নুরুল কাদের খান (ভি.সি, পাবনা)

যুগ সচিব ঃ আঃ গফফার চৌধুরী (এস,পি পাবনা)

সাধারণ সম্পাদক ঃ গােলাম আলী কাদেরী

সদস্য ওয়াজিউদ্দীন খান

সদস্য ও দেওয়ান মাহববুল হক।

সদস্য ও আব্দুস সােবহান (চেয়ারম্যান দােগাছি ইউপি)

ছাত্রনেতা আব্দুস সাত্তার লালু, ইকবাল হােসেন, রফিকুল ইসলাম বকুল, বেবি

ইসলাম।।

এই সংগ্রাম পরিষদের একমাত্র জীবিত আছেন গােলাম আলী কাদেরী ও ওয়াজিউদ্দীন খান, বেবি ইসলাম। | ২৮ মার্চের যুদ্ধে পাক বাহিনী সম্পূর্ন পরাস্ত হয়। যে কারণে পাবনার প্রশাসনিক ব্যাবস্থা চালু করে অফিস আদালত খােলার ফরমান জারী করা হয়, কিন্তু জেল থেকে মুক্ত হয়ে মাওবাদি নকশালেরা অশান্তির বীজ বােনা শুরু করলাে। ৪ এপ্রিল পাবনাবাসীর প্রাণ প্রিয় নেতা আমজাদ হােসেন হার্ট স্ট্রোকে মৃত্যু বরন করলে পাবনা বাসির সামনে দুর্যোগ নেমে আসে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমজাদ ভাই ও বগা ভাইকে বড় ভাই হিসাবে শ্রদ্ধা করতেন এবং ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকে বন্ধু রূপে মনে করতেন।

২৯ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পাবনা মুক্ত থাকে যে কারণে ঐ সময় ক্যালকাটা আনন্দ বাজারও ইষ্টটেমেন্ট প্রত্রিকার সাংবাদিক পাবনা আসে। পাবনা মুক্ত হওয়ার সংবাদ ফলাও করে প্রচার করে। ২৯ মার্চ আর্মিরা সকালে যাওয়ার আগে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এড্যঃ আমিউদ্দিন এমপিএ, ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, আবু সাঈদকে হত্যা করে।

১লা এপ্রিল ঃ পাবনা সংগ্রাম কমিটির সংঙ্গে চুয়াডাঙ্গার এমপিএ ডাঃ আসাবুল। হক ও ইপিআর এর সেক্টর কমান্ডার মেজর ওসমান এর মধ্যে আলােচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয় পাবনাকে মুক্ত রাখতে ৬০০ সসজ্জিত ইপিআর এর সদস্য তাদের অস্ত্রসস্ত্র ও রসদ সম্ভার প্রয়ােজন মত দেওয়ার অঙ্গিকার করে। তাদের রাজ হওয়ার সকালে আমি নবাব মােল্লা ও তার ভাগ্নেকে নিয়ে স্পেশাল ট্রেনে চুয়াডাঙ্গায় পেছায়। মেজর ওসমানের বাসায় তখন বিএসএফ এর ইষ্টান উইং এর কমান্ডার উ9্যাচাৰ্য উপস্থিত ছিল। তার সাথে কথা হয় ১ দিনের মধ্যে চাহিদা মত অস্ত্রসত্র পাবনাতে পৌছে দেওয়া হবে। কথা শেষ করে পাবনাতে ফিরে আসি।

| ৩ রা এপ্রিল ৪ ক্যাপ্টেন বজলুল হুদার নেতৃত্বে নগর বাড়ী ঘাটে খালি পল্টনে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হলাে।

| ৪ঠা এপ্রিলঃ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ইপিআর ওয়ারলেস যােগে বেড়ার অধ্যাপক আবু সাঈদ এম,এন,এ কে কাজিপুরে ডেকে পাঠায়। তাকে সাথে নিয়ে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথের মধ্যে জয়পুর হাটের এম.এন. এ ডাঃ মফিজ উদ্দিনের সাথে দেখা হয় এবং সঙ্গে করে নিয়ে যায়।

| ৫ এপ্রিলঃ আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডঃ আমজাদ হােসেন ও ন্যাপ নেতা বাবু রনেশ মৈত্রকে ভলগা ওয়াগন গাড়ী কের কোলকাতায় পাঠানাে হয়।

| ১০ এপ্রিল ও নগর বাড়ী ঘাটের এপারে পাক বাহিনী চলে এসেছে ঘরবাড়ী জ্বালাতে জ্বালাতে তারা পাবনা প্রবেশ করছে সে এক বিভীষিকাময় মুহুর্ত। দুপুরের পরে ২ টায় ইপিআর ট্রেকনিক্যাল স্কুলে অবস্থান নেওয়ায় জনগন সর্তস্ফুর্ত ভাবে তাদের খাবার পরিবেশনা করলাে। তারা একটু স্থির হতেই মাওবাদি নকশালেরা পাবনার পূর্বদিকে এল,এমজির ফায়ার শুরু করে মনে হচ্ছিল আর্মিরা চলে এসেছে যে কারণে ইপিআর সদস্যদের নিরাপদ স্থানে চলে যেতে হুকুম দিলাম। ডিসি, বগা চাচা ও এসপি সাহেবের পরিবার কুমারখালী চলে গেছে। আমি টেকনিক্যাল স্কুলের অফিস বন্ধ করে দিলাম। শহরে থাকা নিরাপদ নয়। অনেকেই কোমরপুরের দ্বীপচরের দিকে চলে যাচ্ছে। শিতলায় হাউজে পড়া কামানের গােলার আঘাত হানায় অন্ধকার মনে হচ্ছে। ওয়াজি উদ্দিন ও পরিতােষ সাহাকে পেলাম। ওদের সাথে নিয়ে চর কোমরপুর জব্বার মােল্লার বাড়ীতে গেলাম। হানাদার বাহিনী পুনরায় পাবনা শহর দখল করে নিল। রাতটা জব্বার মােলার বাড়ী কোন মতে কাটিয়ে কুষ্টিয়া কোট পাড়ায় আমার ভাগ্নে ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম সিদ্দিকির বাড়ী পৌছে দেখি ওদের পরিবার বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। খাওয়ার দাওয়ার করে ওদের সাথে নিয়ে আলম ডাঙ্গায় পৌছি। চুয়াডাঙ্গায় ডাক বাংলাে গেটে পৌঁছে শুনতে পাই ডি.সি সাহেব আমিনুল ইসলাম বাদশা ভাইকে বলছে কাদেরী-উদ্দীন কোথায়? বাদশা ভাই বলছে উদ্দীন মাধপুরে আর কাদেরী সাঁথিয়ায়। এ কথা শােনার পর ডিসি সাহেব কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলছে ওরা “বাচৰে না” আমি গেট থেকে আওয়াজ দেই আল্লাহ রহমতে বেচে আছি। তারা দৌড়ে এসে আমাদের বুকে টেনে নিল। তবে দুঃখের বিষয় সােবহান চেয়ারম্যান সত্যিই বেঁচে নাই। চুয়াডাঙ্গায় তখন ইপিআর আনসার মিলে ১৬০০০ সসস্ত্র জওয়ান মজুদ রাতে সার্বিক পরিস্তিতি নিয়ে আলােচনা হলাে। বগা চাচা, পাবনার ডিসি, কুষ্টিয়ার ডিসি, মেহেরপুর কুষ্টিয়া চুয়াডাঙ্গার এসডিও, এসডিপিও, চুয়াডাঙ্গার এমপিএ সাহেব ঐ সময় উপস্থিত ছিল। চুয়াডাঙ্গার এমপি ডাঃ আসহাবুল হক ও মেজর ওসমান জানালেন তাদের হেফাজতে ৩ কোটি টাকা।

আছে। এ টাকার বিহিত ব্যবস্থা করার প্রয়ােজন। কোলকাতার অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসকে জানাতে হবে।

১৯৭১ সালে ১৭ এপ্রিল। ঐদিন মেহেরপুর বৈদ্যনাথ তলায় আম্রকুঞ্জে গণ। প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক ভাবে শপথ গ্রহণ করেন। এই ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত স্থানটির নাম করন করা হয় মুজিব নগর।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও উপ রাষ্ট্রপতি তাজ উদ্দীন আহম্মেদ ও প্রধান মন্ত্রী। খন্দকার মােস্তাক আহম্মেদ ও আইন সংসদীয় ও পররাষ্ট্র দফতর এ.এইস. এম. কামরুজ্জামান ও স্বরাষ্ট্র দফতর ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও অর্থ দফতর

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহম্মেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, সৈয়দ কামরুজ্জামান

কর্ণেল এম. এ. জি ওসমানিকে মুক্তি বাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। এই অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ইউসুফ আলী গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার। ঘােষণা পত্র পাঠ করেন ও শপথ গ্রহন পরিচালনা করেন। বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর নেতবৃন্দ প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র তৈরি করে কোলকাতা যাওয়ার অনুমতি প্রদান করে। সে কারণে ভােরে গেদে হয়ে ট্রেনে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হই। কোলকাতার গিয়েই এ্যাডঃ আমজাদ হােসেন শ্রী রণেশ মৈত্রর সাথে দেখা করি। ইসাহক রােডের পশ্চিম বঙ্গের এমপিদের হােষ্টেলে প্রফেঃ আবু সাঈদ চৌধুরী, নিকট থেকে এম.এ. মনসুর সাহেবের ঠিকানা নিয়ে দেখা করতে গিয়ে ব্যর্থ হই। পর দিবসে আবু সাঈদকে সঙ্গে নিয়ে বালিগঞ্জের সরােজ সেনগুপ্তের বাসায় এম,এ মনসুর ভায়ের সাথে দেখা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গায় অবস্থান রত সকলকে বর্ডার পার হয়ে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। রাতে এমপি হােস্টেলে বাংলাদেশ সরকার ও আওয়ামী লীগের করণীয় সম্পর্কে মিজানুর রহমান বক্তব্য দেন। দর্শন হয়ে কৃষ্ণনগর বেতাই বিএসএফ ক্যাম্পে চলে যাই। সেখানে কুষ্টিয়া থেকে আনা ৩ কোটি টাকা কড়া পাহারায় রেখে কৃষ ও নগর সার্কিট হাউজে অবস্থান করি। কোলকাতা পৌছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ৩ কোটি টাকার

ব্যাপারে আলােচনা করি। আলােচনায় ৩ কোটি টাকা বিএসএফ ক্যাম্পে থেকে আনার জন্য আমাকে আবার বেতাই যেতে হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ আমিই প্রবাসী সরকারকে প্রথম আর্থিক সহায়তা দিতে সক্ষম হই।

পরিশেষে আমি বলতে চাই ৯৮০০০ হাজার সৈন্য আত্ম সর্শন করেছে বাংলার মাটিতে। যারা দম্ভ করে বলেছিল ২৪ ঘন্টার মধ্যে বলেছিল বাঙ্গালীকে ঠান্ডা করে দেবে, বাংলার মাটি পুড়ে তামা হবে। ইতিহাস স্বাক্ষী বাংলার মাটিতেই তাদের কবর হয়েছিল। সেই কুখ্যাত দম্ভকারী বেলুচিস্তানের কসাই টিকা খান, আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী, রাও ফরমান আলী, ইয়াহিয়া খানদের ইতিহাসের জঘন্যতম আস্তা কুড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বদেশ ভূমিকে শত্রুমুক্ত করা হয়েছে। এখনও ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ মা বােনের ত্যাগের কথা নিরবে নিভৃতে রয়ে গেছে। সেগুলােকে উদ্ধার করে। | তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। ২৯ মার্চ মাধপুর গ্রামে ডিলু, সুধায়, ইউসুফ চেয়ারম্যানরা ঢাল ফালা লাঠি নিয়ে পাক হানাদার দের রুখে দিয়ে এক জ্বলন্ত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাদের সেই ইতিহাস তুলে ধরে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে মুক্তিযােদ্ধা রবিউল আলম এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এই ভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মনের সংকীর্ণতা ফেলে দিয়ে যার যতটুকু অবদান, অবস্থান সে টুকু লেখা হলেই আমরা প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবাে। স্বাধীনতার ৩৯ বৎসর ধুসর স্মৃতির পাতা থেকে এটুকু পেলেই জাতি অনেক কিছু পাবে।




শনিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১

thumbnail

২৯ মার্চ ও স্বাধীনতার গোড়ার কথা




বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা মুক্তির আকাক্ষা ও সংগ্রামকে | সুনিপূর্ণ কারিগরের দক্ষতায় শিল্পীল তুলির আচরে মতরূপ দিতে গিয়ে যিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে মহাকাব্য রচনা করলেন লক্ষ কোটি বাঙ্গালী যার নেততে গর্জে উঠলাে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ, স্বাধীনতার ঘােষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কিন্তু কেন এই মহাকাব্য রচনা করেছিলেন। জানতে আমাকে একটু পিছনে যেতে হবে।

| ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অৰীৰেশনে উর্দু, ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসাবে স্বীকৃতির দাবি উপস্থাপন করেন বীরেন্দ্রনাথ দত্ত। প্রাদেশিক পরিষদের প্রধান মন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন গণ পরিষদের সহ সভাপতি মৌলভী তমিজ উদ্দীন খান এর বিরােধিতা করেন। লিয়াকত আলী খান নিহত হলে খাজা নাজিম উদ্দীন প্রধান মন্ত্রী হন। ১৯৫২ সালে তিনি ঢাকা সফরকালে জিন্নাহর প্রেত্না হয়ে পল্টন ময়দানে জনসভায় ভাষন দেওয়ার সময় আবার বলে উঠেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। একথা শােনার পর ঝিমিয়ে পড়া বাঙ্গালী আবার জ্বলে উঠলাে। ৪ঠা ফেব্রুয়ারী সারা বাংলাদেশে হরতাল পালন করলাে। সভা সমাবেশের উপর ১৪৪ ধারা জারি হলাে। ছাত্র নেতারা ১৪৪ ধারার ভেঙ্গে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল । ২১শে ফেব্রুয়ারী ছাত্র জনতা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে এগিয়ে যেতে শুরু করলাে। ৩.৩০ মিনিটে ছাত্র জনতার উপর পুলিশের গুলি। আবুল বরকত, ছালাম, রফিক, জব্বার, শফিকুরের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হলাে। তাদের রক্ত বৃথা গেল না। উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হলাে পশ্চিমা শাসকগােষ্ঠী। হক-ভাষানী-সােহরাওয়ার্দি-র নেতৃত্বে ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুজফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৮ আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে আওয়ামীলীগ১৪৩টি আসন, কৃষক শ্রমিক পার্টি- ৪৮টি আসন, নেজামে ইসলাম- ২২টি আসন, গণতান্ত্রিক দল- ১৩টি আসন, খেলাফত রব্বানী পাটি- ০২টি আসন এবং মুসলিমলীগ- ০৯টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে মুসলিমলীগকে জনগণ ঘৃনাভরে প্রত্যাখান করলাে। এর পর শুরু হলাে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র। বাঙ্গালাদের ক্ষমতায় যাওয়া যে করেও তােক বন্ধ করতে হবে। ভারত সফরকালে এ,কে ফজলুল হক যে ভাষন দেন তারই অপব্যাখ্যা করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযােগ তুললাে। যে কারনে মাত্র ৪৫ দিনের ব্যবধানে যুক্তফ্রন্ট সরকারকে। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ক্ষমতাচ্যুত করা হলাে। বাঙ্গালীরা অধিক আসন পাওয়া সত্ত্বেও তাদের রাষ্ট্রক্ষমায় যেতে দেওয়া হলাে না। নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্রের মামলায় শেখ মুজিবকে কারাগারে রেখে প্রহসনের বিচার শুরু কলাে । জনগণ একথা পরিস্কারভাবে বুঝতে পারলাে। পাকিস্তানের শাসকগােষ্ঠী মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার মাধ্যমে বাঙ্গালীর ক্ষমতাকে চিরতরে বন্ধ করে দেবে। যে কারনে বাঙ্গালার জনগণ ফুসে উঠলাে। তাদের আন্দোলনের কাছে আইয়ুব খান নতি স্পীকার করে শেক মুজিবকে মুক্তি দেন। তিনি কথা দেন যে, তিনি আর কখনও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদন্দিতা করবেন না। এখানেও বাঙ্গালীর বিজয় হলাে।

এরপর ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদের নির্বাচন, ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন হলাে। এই নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি, প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ৩রা জানুয়ারী রেসকোর্স ময়দানের আওয়ামীলীগের নির্বাচিত সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেন। শপথ বাক্য পাঠ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। যেহেতু আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। হিসাবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় বসবে এটাই নিয়ম। আবার ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ক্ষমতা যে ভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিল সেইভাবে ষড়যন্ত্র শুরু হলাে। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ালেন সেনা প্রধান ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা দিয়ে। ইয়াহিয়া সামরিক আইন জারি করলেন। ৩রা মার্চ সংসদ অধিবেশন ডাকা হলাে। ১লা মার্চ গুজব ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বেতারে। গুরুত্বপূর্ণ ভাষন দিবেন কিন্তু তিনি ভাষন দিলেন না। তার ঘােষনা রেডিওতে পাঠ করে শােনানাে হলাে। সেখানে বলা হলাে ত’মার্চ অধিবেশন বসবে না। অধিবেশন অনিদ্রিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘােষনা করা হলাে। এই ঘােষনা শােনার পর ঢাকা সহ সারা বাঙ্গালাদেশ গর্জড়ে উঠলাে। বাঙ্গালার মানুষ রাজপথে নেমে এলাে। ধানমন্ডীর বাসায় লাখাে মানুষের ভীড়। ছাত্ররা স্লোগান দিল

“কৃষক শ্রমিক অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর, তােমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা”

বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ জনতার মনােভাব বুঝতে পারলেন। এবং তিনি ঘােষণা দিলেন যা বলার ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বলা হবে। পশ্চিমারা বুঝতে পারলেন শেখ মুজিব এবার বেপরােয়া। তাকে কোন কৌশলেও বাঁধা যাবে না। যে কারনে তড়িঘড়ি করে বেতার যােগে ২৫শে মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করলেন। পক্ষান্তরে কশাই নামে খ্যাত লেঃ জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব

পাকিস্তানের গর্ভনর নিযুক্ত করা হলাে। এতকিছু কৌশল করা হলাে যাতে শেখ। মুজিব ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতার ঘােষণা না দিতে পারেন।

সেদিনের সকাল ছিল ৭ই মার্চের উত্তাল জনসমুদ্র মূহ মূহ জােগান। গর্জনে ফেটে পড়ছে রেসকোর্স ময়দান। পতপত করে উড়ছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ৩,২০ মিনিটে সাদা পাঞ্জাবী, হাতাকাটা কালাে কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধু শেক মুজিব বাতাসের বেগে উঠে এলাে মঞ্চে। লক্ষ্য জনতার মুষ্ঠিবন্ধ হাত উপরে আরেক হাতে বাঁশের লাঠি। এবার বঙ্গবন্ধু ঘােষণা দিল

“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম”।

যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মােকাবেলা করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘােষণার মধ্য দিয়ে বাঙ্গলী রাজপথে নেমে এলাে। জেলায় জেলায়। গঠন করা হলাে সংগ্রাম কমিটি। পাবনা জেলায় ৩১ সদস্যের একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হলাে। তারা হলেন- ।

জনাব আমজাদ হােসেন এমএনএ জনাব আব্দুর র(বগা) মিয়া। জনাব এডভােকেট আমিন উদ্দীন জনাব আমিনুল ইসলাম (বাদশা)। জনাব এডভােকেট আমজাদ হােসেন। জনাব ওয়াজি উদ্দীন খান। | জনাব গােলাম আলী কাদরী সহ থানা ওয়ারী নেতৃবৃন্দ। স্বেচ্ছাসেবক প্রধান হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়

জনাব মােঃ রফিকুল ইসলাম (বকুল), ইকবাল হােসেন, বেবী ইসলাম, মােকাদ্দেস হােসেন ফুটু প্রমুখ।

২১শে মার্চ ভুট্টো ঢাকায় এলেন। ২২শে মার্চ ইয়াহিয়া, ভুট্টো, শেখ মুজিব ১ ঘন্টার মিটিং করলাে । সিদ্ধান্ত হলাে সামরিক শাসন তুলে নেবেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ তলের হাতে ক্ষমতা দেবেন। আপাততঃ ইয়াহিয়াই প্রেসিডেন্ট থাকবেন। আরােও অনেক কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলাে কিন্তু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সিদ্ধান্তগুলির বাস্তবায়নের ঘােষণা দেওয়ার কথা থাকলেও তালবাহানা করে সময় ক্ষেপন করতে লাগলাে। পাবনা বাসী যখন দেখলাে টেলিফোন ভবন, সার্কিট হাউজ, বিসিক শিল্পনগরী সহ বেশ কিছু ভবন পাক আর্মিরা দখল করে অবস্থান নিল। ১৪৪ ধারা জারি করে রাজনৈতিক নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করলাে। শুধু তাই নয় তাদের অবস্থানের জায়গাগুলিতে মজবুত বাঙ্কার তৈরী করে রণসাজে সাজতে লাগলাে।

আমাদের বুঝতে বাকি থাকলাে না বঙ্গবন্ধুর সাথে আলােচনার নামে কালক্ষেপন করে বাঙ্গালী নিধনের নীল নকশা তৈরী করছে। মেঘে মেঘে বেলা বাড়ছে। তলে তলে লেঃ জেনারেল টিক্কা খান গণহত্যার নীল নকশার পরিকল্পনা। শেষ করছে। তারিই বহিঃপ্রকাশ ঘটলাে ২৫শে মার্চ রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর ট্যাংক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাে। ঢাকা সহ সারা বাঙ্গালায় বর্বরােচিত হত্যাকান্ড, অগ্নিসংযােগ শুরু করে দিল। পাবনায় পাক বাহিনী আমিন উদ্দীন, এমপিএ, আবু সাঈদ তাকুলদার, ডাঃ অমলেন্দু দাক্ষী, মােশারফ হােসেন মুজার, আব্দুল খালেক, আলহাজ্ব কফিল উদ্দীন আহম্মেদ, রাজেম পাগল এদের গ্রেফতার করলাে। পাবনাবাসীর কাছে পরিস্কার হয়ে গেল ওরা কাউকেই ছাড়বে না। এর পরে পাবনা দৃশ্যপটে বাঙ্গালী নিরস্ত্র হলেও মেধামননের ও সাহসীকতার উপর ভর করে পাবনা পূর্বপশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ পুলিশ লাইন, টেলিফোন ভবন, ইপসিক শিল্প নগরী সহ পাক বর্বরদের অবস্থানের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাদের পাবনা জমিন থেকে নিঃচিহ্ন করে দিল। যে কারনে ২৯শে মার্চ থেকে ১০ই এপ্রিল পর্যন্ত পাবনা হানাদার মুক্ত থাকে।

পাবনার যুদ্ধের পর দেখা গেল বেশ কিছু পাক বাহিনী বিসিক শিল্প নগরী সহ গমের মাঠে আশ্রয় নিয়েছিল। ওয়ারলেসে সৈনিকদের দুরবস্থার কথা জেনে মেজর আসলাম বালুচকে পাবনায় পাঠায় তাদের উদ্ধারের জন্য। তখন পাবনা-ঈশ্বরদী রাস্তায় বেরিকেড থাকায় ঐ রাস্তা দিয়ে সৈন্যদের কনভয় যেতে না পেরে মাধপুর হয়ে পাবনায় যায়। সেদিন ছিল ১৯৭১ সালের ২৯শে মার্চ।

পাবনা থেকে অবশিষ্ট সৈন্যদের নিয়ে ফেরার পথে পাকশী, রুপপুর, সাহাপুর, জয়নগর, মানিকনগর, লক্ষীকুন্ডা, কামালপুর, আওতাপাড়া, বাঁশেরবাদা এবং মাধপুরের মুক্তিকামী লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ লাঠি, ফালা, রামদা, হাসুয়া, তীলধনুক, ২/৪টি লাইসেন্সন করা গাদা বন্দুক ও টুটুবর নিয়ে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পরবর্তীতে তা মাধপুর যুদ্ধ নামে পরিচিত লাভ করে। সেদিনের বীরদের বীরগাথা বীরদের নিয়েই আমার এই ক্ষুদ্র লেখনি যা আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে গেলাম।


thumbnail

যে কথা দিয়েছিল রাজুরা


২৯শে মার্চ সেই কথারই প্রতিফলন ঘটেছিল মাধপুরের প্রতিরােধ যুদ্ধে। ২৭ তারিখ থেকে সাজ সাজ রবে ঈশ্বরদী, পাকশীর লক্ষ যুবক সেনারা পেট্রোল বােমা, সাধারণ বােমা, গাদা বন্দুক, ২০২ বাের রাইফেল, বাঁশের লাঠি, ফালা, বল্লম, কুচ, তীর-ধনুক হাতে আওয়ামীলীগ নেতা শহীদ আজিম উদ্দীন, ডাঃ রশিদ, মন্টু ভাই, পাকশীর ইউসুফ চেয়ারম্যান আর খিছু সুধার অগ্নিদৃপ্ত নেতৃত্বে গণমানুষের স্রোত সেদিন সাহাপুর, ছিলিমপুর, আওতাপাড়া, বাশেরবাদা হয়ে মাধপুর বটতলা এসে দক্ষিণ পূর্বদিকে কনভয়ের গােড়ানী, মেশিনগানের কটকট শব্দ আর হেলমেটের আধাে ছায়া তখনও বুঝিনাই পাক হানাদার বাহিনীর হাতে চাইনিজ স্কেচগুলাে আর কিছুক্ষণ পরেই হৃদয় বিদীত ঝাকুনীর সৃষ্টি করে রাজুদের বক্ষ পাটা ঝাঁঝরা করে বেরিয়ে যাবে। ওহিদের মাথার মগজগুলাে বারুদের গন্ধে রক্তসাত করবে। রাজ্জাক ভাই, সবুর ভাই, লতিফ ভাইকে আর ওর নিকটজনেরা। কখনও নিকটে পাবে না। ২৭-এর কটা দিন আগেই রাজু বলেছিল আমিই স্বাধীনতার জন্য সর্বাঙ্গে কলিজা নিংড়ানাে লাল থােকা থােকা রক্ত দেব---- তাই হয়েছিল। আজকে অনেকেই বলেছেন সে যুদ্ধে নাকি তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন--- আসলে কি? কার কার নেতৃত্বে মাধপুর রণাঙ্গন জনশ্রুত রক্তপ্লাবিত হয়েছিল। চক্রবর্তীদার গানটা বারবার মনে পড়ছে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ, সুধা খিছুর বাংলাদেশ ------ ৩০ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকশীর নির্মাণাধীন শহীদ মিনারে দরাজ কণ্ঠে গাওয়া ---------- | এই বইটির লেখক মুক্তিযােদ্ধা রবিউল আলমকে লাখাে লাখাে সালাম জানাই। এই মাধপুরের মাটিকে হৃদয়ে ধারণ করে পাবনা মুক্তিসেনারা যুদ্ধে জয়। করেছে। স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছে।

অনেকে অনেক কিছু হয়েছেন। মাধপুর বাসীকে হৃদয়ে ধারণ করে নমঃ নমঃ স্বরে বাংলার জয় হােক। রাজু, রাজ্জাকরা অমর হােক। --


thumbnail

মতামত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙ্গালী জাতি ঝাপিয়ে পড়েছিলে মুক্তিযুদ্ধে । মুজিৰ মন্ত্রে উজ্জীবিত নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষগুলো কিভাবে খালি হাতে বর্বর পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করেছিল তারই জলন্ত দৃষ্টান্ত আপুর রণাঙ্গন। সেদিন রূপপুর, পাকশী থেকে মাধপুর পর্যন্ত অগণিত মানুষ সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। সে যুদ্ধে রাজু, নবাৰ, ওহিদসহ অনেকেই নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল। তৎপরবর্তী ৯ (নয়) মাসে পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গনে অনেকের রক্তের বিনিময়ে আজকের স্বাধীনতা। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং মুক্তিযােদ্ধাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার ইতিহাস জানানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সে দায় থেকে মুক্তিযােদ্ধা রবিউল আলম সেন্টু কিছুটা হলেও আমাদের দায়মুক্তি দিয়েছেন। আগামীতে মুক্তিযোদ্ধারা লেখার ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন। তাদের লেখনিতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা উপাখ্যান।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লালিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সোনার বাংলা গড়তে সকলকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মহান মুক্তিযােদ্ধাদের সশ্রদ্ধ সালাম । জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। জয় হােক মুক্তিকামী বাংলার মানুষের।

গােলাম ফারুক খন্দকার (প্রিন্স)।

সংসদ সদস্য পাবনা-৫।


-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

| বাঙালী জাতির দীর্ঘদিনের অবহেলা আর বঞ্চনার অবসান ঘটাতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাঙালি জাতিকে মহাকাব্য সৃষ্টির মাধ্যমে এক দিক দর্শন দেন। সে এক অমােঘ মন্ত্র। যে মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ৭ সাড়ে সাত কোটি বাঙালী পশ্চিমা শাসক গােষ্ঠীর বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। সে মন্ত্রের দীক্ষায় বাংলার শ্রেষ্ঠ সম্পদ তরুণ সমাজ অকাতরে নিজের জীবন বলি দিয়ে রক্তের বিনিময়ে অর্জন করলাে স্বাধীনতা। পাবনার জনগণ ২৮ মার্চ ১৯৭১ খালি হাতে পাকিস্তানের সুশৃংখল বাহিনীকে ধবংস করে পাবনা হানাদার মুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনা করেছিল। ৩৯ বৎসর আগের সেই সব স্মৃতি বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল। সেই সমস্ত স্মৃতিময় ঘটনাগুলাে বীর মুক্তিযােদ্ধা মােঃ রবিউল আলম সেন্টু লিপিবদ্ধ করে আমাদের সবার স্মৃতিকে একটু নাড়া দিয়ে আন্দোলিত করেছে। জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার আহবান করছেন স্বাধীনতার অনেক ঘটনা এখনও অজানা রয়ে গেছে। সেগুলাে জনগণের সম্মুখে প্রকাশ তােক। তার সাথে আমি একাত্মতা ঘােষণা করে পাবনা জেলার মুক্তিযুদ্ধকালীন ঘটনাগুলাে আমার কমান্ডে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবাে বলে আশা করি। আমি মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে পাবনার মাওবাদীদের ১৯৭১ সালের কর্মকান্ডকে ঘৃণা করি বিশেষ করে তাদের দ্বারা আমি নিজেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তারা আমার পিতা কোবাদ আলীকে হত্যা করেছিল। যে কারণে পাবনার পশ্চিমের জনগণকে প্রতি মুহুর্তে যুদ্ধ সাজে সেজে থাকতে হতাে। পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গনের যুদ্ধগুলির বর্ণনা হৃদয়স্পর্শী। বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ চর মাধপুরে হত্যাকান্ডের আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম। সেদিন ভারত থেকে অস্ত্র গােলা বারুদ, নিয়ে রফিকুল ইসলাম বকুল, ফজলুল মন্টু, আঃ রহিম পাকনের সাথে চর মাধপুর গ্রামের শেল্টারে অবস্থান নেই। রাস্তা ঘাট তেমন পরিচিত ছিলনা তাছাড়া অস্ত্র গােলা বারুদ রাতেই মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ অধিক জীবনক্ষয় ও সম্পদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে বকুল ভাই সেদিন পাকবাহিনীর সাথে লড়াই করা বন্ধ করেছিল। কিন্তু সেদিন চর মাধপুরে ধবংসলীলা ও রক্তের হােলি খেলা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। যা বইটিতে লিপি করা আছে। তবে ট্যাপা গাড়ী নদী সাঁতরিয়ে আমরা খড়ের দাড়ি (পােড়ার দাড়ি বট গাছ তলায়) থেকে ফিরে এসে ৰাইনাে কুলার দিয়ে অনেক রাজাকারকে চিনতে পেরেছিলাম। সেদিন যারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছিল আজও তারা তালিকাভুক্ত (শহীদ) হতে পারেনি। তাদের পরিবার সরকারি সাহায্য সহযােগিতা এখন পর্যন্ত পায়নি, যা অনভিপ্রেত দুঃখ জনক। আজকের প্রজন্ম পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গন সমন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবে। আমি বইটি ও লেখকের সাফল্য কামনা করি।

মােঃ হাবিবুর রহমান হাবিব

ইউনিট কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযােদ্ধা সংসদ পাবনা জেলা ইউনিট কমান্ড


thumbnail

পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গন ৭১

দুটি কথা

পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গন মূলতঃ নাজিরপুর থেকে মাধপুর। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ এলাকার মানুষগুলাের স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন। কর্মকান্ড, তাদের ত্যাগ, অর্জন নিয়ে যতটুকু সম্ভব আলােচনা করা হয়েছে। পাক বাহিনী মাওবাদী নকশাল ও রাজাকারদের অত্যাচার নির্যাতন, যুদ্ধের করুণ পরিণতির সামান্য ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। স্বাধীনতার ৩৮ বৎসরে শহীদদের নামগুলাে হারিয়ে গেছে। নাজিরপুরের ৬২ জন শহীদ, চরমাধপুরের ১৬ জন শহীদের নাম পরিচয়সহ কিছু দুর্লভ ছবি সংগ্রহ করে বইটিতে সংযুক্ত করে দায়বদ্ধতা থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি।

| বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ আর পাবনার পশ্চিম রণাঙ্গনের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিশ্লেষণ এক হতে পারেনা। সেদিন মাওবাদী প্রতিরােধে অথবা মাধপুর প্রতিরােধ যুদ্ধে সংগ্রাম পরিষদের ডাকে যারা স্থানীয় ভাবে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ। করেছিলেন তাদের অনেকেই শহীদ হয়েছিলেন, অনেকেই মারা গেছে। তাদের মূল্যায়ণ করা হয়নি আবার অনেকেই ইতিমধ্যেই তালিকাভুক্তি হয়ে মুক্তি যােদ্ধার সম্মান পাচ্ছেন। অনেকেই নিরবে গুমরে মরছে। সে সমস্ত স্থানীয় মুক্তিযােদ্ধাদের নামগুলাে বইটিতে লিপিবদ্ধ করেছি। বদি কমান্ডার, আবুল কালাম আজাদ বাবু, ইসরাইল হােসেন মেছের, সাঈদ আক্তার ডিডু ও আটঘরিয়া থানা কমান্ডার শাহাজাহান তাদের মতামত দেন। কারণ যুদ্ধকালীন কমান্ডারের মতামত ছাড়া বর্তমানে কাউকে মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত করা আইনত ঠিকনা। তাদের। মতামতের বাইরে তালিকা তৈরী হলে তা কখনই স্বচ্ছ হবে না। বিতর্কিত কোন কিছুরই ফল কখনই শুভ হয় না।।

২৯ মার্চ ১৯৭১ মাধপুর পাক বাহিনীর সাথে প্রথম প্রতিরােধ যুদ্ধ হয়। সে যুদ্ধ মূলতঃ পাকশি, রূপপুর, সাহাপুর, মহাদেবপুর, আওতাপাড়া, মানিক নগর, জয় নগর, লক্ষ্মীকুন্ডা, কামালপুর, বাঁশেরবাদা, মাধপুরের হাজার হাজার জনতা খালি হাতে যুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর ঘােষণার প্রতিফলন ঘটায়। সেদিনের রূপকার সামসুর রহমান শরীফ ডিলু, কাজি সদরুল হক সুধা, ইউসুফ চেয়ারম্যানসহ সঠিক অংশগ্রহণকারী নেতৃবৃন্দের নাম তালিকাভুক্ত করতে পেরেছি। তবে অনেকের নাম বিস্তারিত বিবরণ লেখা সম্ভব হয় নি। এর কারণ অনেকের সাথে যােগাযােগ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমা প্রার্থী।

স্বাধীনতার ইতিহাসে পাবনা নয়নামতি গ্রামের মুক্তিযােদ্ধার সংখ্যা ইতিহাস খ্যাত। তাদের সবার নামগুলাে লিপিবদ্ধ করেছি তবে তাদের নিজস্ব মতামত নিয়েলিখতে চেয়েও পারিনি যে কারণে তাদের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। পক্ষান্তরে নয়নামতি গ্রামের লিডার, গ্রম্প লিডার, টু-আইসি সহ সকল সহযােদ্ধা মাধপুর, নাজিরপুর, খােকড়া, টিকরী গ্রামে সেন্টাররত ছিল এবং যুদ্ধ গুলিতে নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের লেখা সংযােজন করতে পারলে বাইটি আরাে তথ্য সমৃদ্ধ হতাে । এখানেও সবার সময়গুলাে দায়বদ্ধ রয়েছে। উল্লেখিত গ্রাম সমূহে মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে। অনেকেই দাবিদার হবে বলে আমি মনে করি।।

মাধপুরে লতিফা খাতুন চুনি, সেলিনা বেগম জলি, লুৎফুন্নাহার, নাজমা, বেবী নাজনীন আরা নিরা ও দিপু নারী মুক্তিযােদ্ধা হিসাবে ট্রেনিং নিয়েছিল। অস্ত্র চালনায় তারা পারদর্শি ছিল। তারা তালিকা ভুক্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেনি। তাদের কর্মকান্ডের পুরস্কার হিসাবে আগামীতে তাদের নাম তালিকা ভূক্ত করে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সম্মান দেখানাে যায় কিনা ভেবে দেখা দরকার।

১৯৭১ সালেই প্রতিদিন লিখতাম। অযত্ন অবহেলায় লেখাগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আমার ছােট বােন ফিরােজা বেগম সেকেন্ডারি এডুকেশন অফিসার বাঘা, রাজশাহী লেখাগুলি যত্ন সহকারে জোড়া তালি দিয়ে পাণ্ডুলিপি আকারে প্রকাশের যাবতীয় ব্যবস্থা করেছে। তার আন্তরিকতার ছোঁয়া না পেলে লেখাটি কোন দিনই আত্মপ্রকাশের সুযােগ পেতনা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কোন ভাষাই আমার জানা নেই।

মহিয়সী প্রকাশেনের সত্বাধিকারী রেহানা সুলতানা শিল্পী ও বাঁশেরবাদা কলেজ গেট সংলগ্ন কম্পিউটারের মালিক জহুরুল ইসলাম অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে লেখার ব্যাপারে সাহায্য সহযােগিতা দিয়ে আমাকে ঋণী করে রেখেছে। লেখার মধ্যে অনেকের দাবি পূরণ সম্ভব ছিলনা, সে কারণে আমি খুব হতাশ ছিলাম। কিন্তু আমার রাজনৈতিক গুরু, প্রবীন রাজনীতি বিদ বীরমুক্তিযােদ্ধা সাংবাদিক, কলামিষ্ট নাজিরপুরের কৃতি সন্তান জনাব আঃ হামিদ খান লেখার ব্যাপারে তাগিদ, নানা তথ্য উপাত্ত্ব দিয়ে বইটিকে তথ্য নির্ভর করে দিয়েছে। তার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ।

নাজিরপুর টিকরি মাধপুর গ্রামের মায়েরা মুক্তি যুদ্ধের জন্য মুক্তি যােদ্ধাদের জন্য যে ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নিমিত্তে তাদের ছবিসহ নাম সংযােজন করা হলাে। আগামী প্রজন্ম কৃতজ্ঞ ভরে চিরদিন বই মুক্তি মাতাদের স্মরণ করবে।

পরিশেষে হাজার বৎসরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী স্বাধীনতার ঘােষক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ১৫ আগষ্টে নিহত তার পরিবারের সকল শহীদ, স্বাধীনতা। যুদ্ধে নিহত সকল শহীদ নাজিরপুর ও মাধপুর চর মাধপুরে নিহত সকল শহীদের। আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দুটি কথার ইতি টানলাম।




 

About

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

ব্লগ সংরক্ষাণাগার

contact us

পাক বাহিনীর শেষ পরিণতি

২৯ মার্চ ২০০৮ শনিবার মাধপুর ঐতিহাসিক বটতলায় | জনাব সিরাজুল ইসলাম মন্টু কোম্পানী কমান্ডার স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে যে ভাষণ তিনি দিয়েছিলেন সেখান...